আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন: টোকিওতে প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত
জাপানে চার দিনের সরকারি সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারো আসোর সঙ্গে বৈঠকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণকে মসৃণ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলোর অংশ হিসেবে আগামী বছরের জুনের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাপানের রাজধানী টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের (জেবিপিএফএল) প্রেসিডেন্ট ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারো আসোর সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই অঙ্গীকার পুনরায় ব্যক্ত করেন।
চার দিনের সরকারি সফরে ‘নিক্কেই ফোরাম ফর এশিয়া’য় যোগদানের পাশাপাশি জাপানি নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে গতকাল (বুধবার, ২৮ মে) স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫ মিনিটে টোকিও পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে তারো আসো বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশংসা করে বলেন, “গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা তিনটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছি—সংস্কার, ছাত্র-জনতার খুনিদের বিচার, এবং একটি অংশগ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচন।” তিনি জানান, সরকারের কার্যক্রমে ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তরুণরা বাধ্য হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি পাল্টে দিতে তারাই আমাকে আহ্বান জানিয়েছে।” জাপানের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “গত দশ মাসে জাপান আমাদের প্রতিটি পর্যায়ে সহায়তা দিয়েছে। এই সফরের একটি উদ্দেশ্য হলো তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো।”
প্রধান উপদেষ্টা আসোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে তিনি সরাসরি চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
বৈঠকে উপস্থিত জাপানি আইনপ্রণেতারা জানান, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে চলমান অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং সেপ্টেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে জাপান হবে প্রথম দেশ যারা বাংলাদেশের সঙ্গে ইপিএ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে জাপানি প্রতিনিধিদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গারা অন্য দেশে নয়, বরং নিজ ঘরে ফেরার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই অপেক্ষা করছে। এটি অন্যান্য শরণার্থী সংকট থেকে আলাদা।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ।