মাদারীপুরে ৫ মাসের শিশুকে যৌন নির্যাতন, বৃদ্ধ আটক
মাদারীপুরের রাজৈরে ৫ মাসের এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এক বৃদ্ধকে আটক করেছে পুলিশ; ঘটনা ধামাচাপা দিতে সালিশের নামে টাকা ও দলিল হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।
মাদারীপুরে ৫ মাসের এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের শিকারের অভিযোগে এক বৃদ্ধকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে জেলার রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের নবপল্লী এলাকা থেকে রহিম ব্যাপারী ওরফে রতন মন্ডল (৬০) কে আটক করা হয়েছে। আটক বৃদ্ধ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিয়া গ্রামের গণি ব্যাপারী ওরফে হরি মণ্ডলের ছেলে। বুধবার (২৮ মে) সকালে এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজৈর থানার ওসি মাসুদ খান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (২৪ মে) দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় ওই শিশুটির মা তাকে প্রতিবেশী কল্পনা দত্তের কাছে দিয়েছিলেন। এসময়ে হাঁস শিকারের জন্য শিয়াল আসলে শিশুটিকে কল্পনা তার স্বামী রতনের কাছে দিয়ে শিয়াল তাড়াতে যান। এসময় শিশুটিকে কোলে নিয়ে যৌন নির্যাতন চালায় রতন। এরপর কোলে প্রস্রাব করেছে এ কথা বলে কল্পনার কোলে দিয়ে ওই শিশুকে তার মায়ের কাছে দিয়ে আসতে বলেন। একপর্যায়ে শিশুটির মা (গোপনাঙ্গে) রক্ত দেখে প্রথমে স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা করেছেন। পরের দিন রোববার (২৫ মে) অবস্থার উন্নতি না হলে সেখান থেকে শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে সেখানে সালিশ মীমাংসা নাম করে মোটা অঙ্কের টাকাসহ জমির দলিল হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেন কদমবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলক বসুর ছেলে অমলেন বসু কচিসহ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। সোমবার (২৬ মে) বিকেলে অভিযুক্ত রতনকে একটি ঘরে আটকে রেখে সেখানে মারধর করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে আবার রতনের বসতবাড়ির জায়গার দলিল লিখে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। এসময় একজন গণমাধ্যম কর্মীরা খবর পেয়ে রাজৈর থানা পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত ওই বৃদ্ধকে আটক করে এবং একই সাথে দলিলপত্রও উদ্ধার করেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মুসলিম থেকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে রহিম থেকে রতন হয়েছেন শিশুকে যৌন নির্যাতনকারী বৃদ্ধটি। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু এক নারীকে বিয়ে করে কদমবাড়ি ইউনিয়নের নবপল্লী গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করে আসছিলেন রতন।
কদমবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলগ বসুর ছেলে অমলেন বসু কচি সালিশ মীমাংসা বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমাকে প্রতিবেশী হিসেবে ডাকছিল, তাই গেছি। কিন্তু কোনো সালিশ মীমাংসা হয় নাই। তবে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সমাধানের কথা বলছিল। পরে পুলিশ এসে অভিযুক্ত ও ভিকটিম দুই পক্ষকে থানায় নিয়ে গেছে। পুলিশ নিয়ে গেলে তো আর সালিশ মীমাংসা করার কিছু থাকে না।” এসময় জায়গা জমি লিখে নেওয়ার চেষ্টার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “৫ মাসের শিশুর সাথে এমন নিকৃষ্ট কাজ যে করে তাকে কি ছেড়ে দেবে মানুষ! রতন এর আগেও আরো ৩-৪ টা এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে।”
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান জানান, “রহিম ওরফে রতন একটা শিশু বাচ্চার সাথে অশালীন কার্যকলাপ করেছে। খবর পেয়ে তাকে আটক করা হয়েছে। ভিকটিমও আমাদের থানা হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন।”