টাঙ্গাইল

এলজিইডিতে ৯ মাসে ২২৮৭ স্কীমের অগ্রগতি ৮১%, সাবেক এমপিদের সুপারিশকৃত ২৮ স্কীম বাতিল

টাঙ্গাইল এলজিইডিতে নির্বাহী প্রকৌশলীর তৎপরতায় উন্নয়ন কাজে গতি; অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রিতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ

টাঙ্গাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) চলতি অর্থ বছরে পূর্ববর্তী এমপিদের সুপারিশকৃত ২৮টি উন্নয়ন কাজের স্কীম বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে দপ্তরের চলমান ৫৪৭টি উন্নয়ন স্কীমের ৪০টিরও বেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে চূড়ান্ত পত্র দেওয়া হয়েছে। ফলে গত ৯ মাসে এলজিইডির উন্নয়ন কাজে গতি বেড়ে গড়ে ৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল এলজিইডিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন নামে ১৯টি প্রকল্পের অধীনে ২২৮৭টি স্কীম গ্রহণ করা হয়। স্কীমগুলোর প্রাক্কলিত ব্যয় বা চুক্তিমূল্য ধরা হয় প্রায় দুই হাজার ৫৬৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে প্রায় এক হাজার ৯১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪৭৯টি স্কীমের কাজ শেষ করা হয়েছে এবং ৫৪৭টি স্কীমের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া পূর্ববর্তী সরকারের সাবেক এমপিদের সুপারিশকৃত ২৮টি স্কীমের উন্নয়ন কাজ বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে।

Image

টাঙ্গাইল এলজিইডি গৃহীত ১৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি প্রকল্পের বাতিলকৃত ২৮ স্কীমের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অর্থাৎ টাঙ্গাইল প্রজেক্টের সর্বোচ্চ ১১টি, এমআরআরআইডিপি এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০টি, সিআইবিআরআর এর তৃতীয় সর্বোচ্চ ২টি রয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা-ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্প, সারাদেশে পুকুর খাল উন্নয়ন প্রকল্প, সাপোর্টিং ফর রুরাল ব্রিজেস প্রজেক্ট এবং ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের ১টি করে স্কীম বাতিল করা হয়েছে।

এলজিইডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান যোগদান করেই উন্নয়ন প্রকল্পের স্কীমগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সরেজমিনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৮টি স্কীম সম্পূর্ণ বাতিল ও চলমান ৫৪৭টি স্কীমের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ৪০টিরও বেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দিয়ে চূড়ান্ত পত্র দিয়েছেন। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলমান স্কীমের কাজে গতি বেড়েছে। গত ৯ মাস ধরে চলমান ৫৪৭টি উন্নয়ন স্কীমের কাজের অগ্রগতির গড় হার ৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

Image

সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দায়িত্বভার পেয়েই উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি ও কাজের মান নিয়ে তদারকিতে নামেন। তিনি উপজেলা প্রকৌশলীদের দ্রুত ও মান সম্মত উন্নয়ন কাজ নিশ্চিতে নির্দেশনা দেন। এতে তারা কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুরোধ-উপরোধ মানতে পারছেন না। তারা গুণগত মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ বুঝে নিতে তৎপর হয়েছেন।

স্ব স্ব স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার সড়ক-সেতু-কার্লভাট নির্মাণে ইদানিংকালে বেশ তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন দিন ও রাতে উন্নয়ন কাজ করছেন। স্থানীয় এলজিইডির লোকজন প্রায় দিনই কাজের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। এভাবে উন্নয়ন কাজ করা হলে দেশ অনেক আগেই উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতো।

কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জানান,

উন্নয়ন কাজে এখন আর কোনোপ্রকার অবহেলা বা ধীরগতি এবং ইট-বালু-খোয়া ব্যবহারে সামান্যতম ব্যত্যয় করা যাচ্ছে না। এ নিয়মে কাজ করে তারা লাভবান হতে পারবেন না। ফলে তারা লাভের কথা চিন্তায় না এনে কাজ সমাপ্ত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।

উন্নয়ন কাজ বাতিল হওয়া অন্তত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জানান,

সকল নিয়ম মেনে আমরা টেন্ডারে অংশ নিয়ে কাজ পেয়েছিলাম। নানা কারণে কাজ সমাপ্ত করতে বিলম্ব হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের কাজগুলো নির্বাহী প্রকৌশলী বাতিল করে দিয়েছেন।

এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী সহ এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন

Image

টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান,

টেন্ডারে কাজ পেয়ে দীর্ঘদিন উন্নয়ন কাজ ফেলে রাখার কারণে ২৮টি স্কীম বাতিল করা হয়েছে। যেসব কাজ বাতিল করা হয়েছে সেগুলোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ফেলে রাখা কাজগুলো বাতিল করায় অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় হওয়ায় জেলায় এলজিইডির উন্নয়ন কাজে গতি ফিরে এসেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এলজিইডির উন্নয়ন কাজের অংশীজন। নির্দিষ্ট সিডিউল অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ করা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এলজিইডি ও ঠিকাদারের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু প্রতিটি উন্নয়ন কাজ বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় এবং গুণগত মানে কোনোপ্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker