কালিহাতী

ইটভাটা গিলছে রাস্তা-পরিবেশ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সাধারণ জনগণ: নিরব ভূমিকায় প্রশাসন

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাগুজীপাড়া এলাকায় অবস্থিত বিএসকে ইটভাটায় ১০ চাকার ডাম্প ট্রাকের মাধ্যমে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট, সৃষ্টি হচ্ছে ধুলাবালি ও পরিবেশ দূষণ। প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত চলে এসব ভারী যানবাহনের চলাচল, যা জনদুর্ভোগের পাশাপাশি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

গত ৩০ এপ্রিল (বুধবার) এলাকাবাসীর ক্ষোভ চরমে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ জনতা ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করতে যাওয়া ৫টি ডাম্প ট্রাক আটক করে। ট্রাকচালক ও সহকারীরা স্বীকার করেন, বিএসকে ইটভাটার মালিক নাসির হোসেনের উদ্যোগেই তারা এই মাটি সরবরাহ করছিলেন। শুধু অবৈধভাবে মাটি পরিবহনই নয়, ইটভাটার ধোঁয়া, কয়লা ও ধুলাবালির কারণে আশপাশের মানুষ নানাবিধ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন। পাশাপাশি গাছপালা, ফলমূল ও পরিবেশের স্বাভাবিক বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে।

Image

আইনকে তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি ও বসতবাড়ির আশপাশে গড়ে উঠেছে এই ইটভাটা। কাঠ ও কয়লা পুড়িয়ে প্রতিনিয়ত চলছে ইট প্রস্তুত প্রক্রিয়া, যার ফলে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের চোখের সামনে এসব কর্মকাণ্ড চললেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।

নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমির উপরের স্তরের (টপসয়েল) মাটি কিনে তা ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কোনো নিয়ম না মেনে ইটভাটা গড়ে তুলেছে এবং কাঠ ও কয়লা পুড়িয়ে অবাধে ইট প্রস্তুত করছে। এসব ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদের হুমকি দেওয়া হয়, এমনকি চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানো হয়। অনেক সময় নিজস্ব বাহিনী দিয়ে হয়রানিও করা হয়।

Image

এ বিষয়ে বিএসকে ইটভাটার মালিক নাসির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, “আমি টাকা দিয়ে মাটি আনি। এখন যারা মাটি সরবরাহ করছে তারা না পারলে আমি অন্য কারো কাছ থেকে আনবো।” তবে ভাটার পরিবেশ দূষণ ও কাঠের লাকড়ী দিয়ে ইট পুড়ানো সংক্রান্ত প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কথা বলতে বিএসকে ইটভাটায় সরেজমিনে গেলে ভাটার মালিক নাসির হোসেন কে পাওয়া যায়নি। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই কাঠ বোঝাই পিকআপ ইটভাটায় প্রবেশ করতে দেখা যায়।

এবিষয়ে কালিহাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব খায়রুল ইসলাম জানান; আমরা প্রতিদিন রাতে প্রায় তিনটা পর্যন্ত কালিহাতীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসছি এবং জরিমানা করছি। এই বিষয়ে তথ্য পেলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। এসব অভিযানে পুলিশের পেট্রোলিং টীমের সহযোগিতাও প্রয়োজন বলেও জানান ইউএনও খায়রুল ইসলাম।

শুধু বিএসকে ভাটাই নয়, এই এলাকায় পাশাপাশি আরও দুটি ইটভাটা একই প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে চালু রয়েছে। এসব ভাটাও পরিবেশ ও জনগণের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকছে মিশন নাইনটি নিউজের পরবর্তী পর্বে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker