লক্ষ্মীপুর

রাজনৈতিক কারণে সজীব খুন হননি: এসপি

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরে সজীব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিএনপি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাওনা টাকা, বিবাহ ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।

আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এই তথ্য জানান। এছাড়া আজ নিজ কার্যালয়ে  সংবাদ সম্মেলনেও তিনি এসব কথা বলেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির নেতৃত্বে দলটির প্রায় ৬০০০-৭০০০ নেতা-কর্মী শহরে পদযাত্রা করতে গিয়ে অতর্কিতভাবে লাঠিসোটা, ইট-পাটকেল ও ককটেল বোমা মেরে পুলিশের ওপর হামলা করে। কর্তব্যরত পুলিশ জনগণের জানমাল ও সরকারি মালামাল রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক গ্যাসগান ও শর্টগানের রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

তারা (বিএনপির নেতা-কর্মীরা) আধুনিক (প্রাঃ) হাসপাতালের সামনে বাইরে রাখা মোটরসাইকেল ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া দোকানপাট ভাঙচুর করে। সংঘর্ষ চলাকালে জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল করে থানা পুলিশকে জনৈক ব্যক্তি জানান, ছুরিকাঘাতে একজন লোক মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছেন। পুলিশ কল রেসপন্স করলেও বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালীন সে মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না।

তাই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা অবধি সময় চেয়ে নেয়। আহত ব্যক্তি জনৈক নোমানের বাসার সামনে পড়েছিলেন। নোমান বাসার দরজা খুলে তাকে দেখতে পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করেন। পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে পুলিশের ঘটনাস্থলে যেতে বিলম্ব হওয়ায় নোমান তার পরিচিত ৩-৪টি অ্যাম্বুল্যান্স মালিককে কল করলেও উত্তপ্ত এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও রাস্তা অবরুদ্ধ থাকায় তারাও (অ্যাম্বুল্যান্স) আসতে অপারগতা প্রকাশ করে। উচ্ছৃঙ্খল বিএনপির নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ দ্রুত সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বিএনপির সঙ্গে পুলিশের যেখানে সংঘর্ষ হয় সেখান থেকে   হত্যাকাণ্ডের স্থানের দূরত্ব প্রায় ২-২.৫ কিলোমিটার। বিএনপির পদযাত্রার রুটের সম্পূর্ণ বিপরীত মূল সড়ক থেকে দেড় শ গজ দূরে কলেজ রোডের পাশে ফিরোজা টাওয়ারের গলির মুখে ৪-৫ জন ছেলে সজীবকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে সজীব নিজেকে বাঁচাতে দৌড়ে ফিরোজা টাওয়ারের এসএস গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দোতলায় উঠে নোমান হোসেনের পাশের ফ্লাটের দরজার সামনে শুয়ে পড়ে। নোমান মুমূর্ষু অবস্থায় সজীবের নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসাসহ আজকের (ঘটনার দিনের) রাজনৈতিক প্রোগ্রামে এসেছে কিনা জানতে চাইলে সজীব জানায় সে কোনো প্রোগ্রামে আসেনি। এভবে আঘাতের কারণ হিসেবে জানায়, পাওনা টাকা এবং বিবাহ সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তারা হামলা করেছে। ঘটনাটির প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে রাত দেড়টায় সেখানে গিয়ে ঘটনার সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সজীবের মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। ভাড়াটিয়া নোমানের সঙ্গে তার শেষ মুহূর্তের কিছু কথা হয়, যার তথ্য অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।

প্রাথমিক সরেজমিন অনুসন্ধানের তথ্য হিসেবে পুলিশ সুপার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির কোনো সত্যতা নেই। এটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। বিএনপি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চালায়। ইতিমধ্যে ভিন্ন একটি ছবি নিয়ে লক্ষ্মীপুরে বিএনপি কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে গুজব ছড়ায়। যার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker