জাতীয়

রূপগঞ্জ ট্রাজেডি: নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজ ও ক্ষতিপূরণ দাবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত সজীব গ্রুপের মালিকানাধীন সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানকার যেসব শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন তাঁদের ব্যাপারে তদন্তের দাবি জানিয়েছে সজীব গ্রুপ ওয়ার্কার্স জাস্টিস কমিটি৷

একইসঙ্গে হতাহতদের পরিবারকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়৷

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সজীব গ্রুপ ওয়ার্কার্স জাস্টিস কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, সদস্য সচিব গোলাম ছরোয়ার প্রমুখ৷

লিখিত বক্তব্যে গোলাম ছরোয়ার বলেন, সজীব গ্রুপ কর্তৃপক্ষের ধারাবাহিকভাবে আইন লঙ্ঘন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধি না মানা, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখে কারখানায় বিপদজ্জনক ও অনিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে অপরাধমূলক অবহেলায় অগ্নিকাণ্ড হয়েছে এবং অর্ধশতাধিক শ্রমিককে হত্যা করা হয়।

বলা হয়, ‘এর আগেও একাধিকবার হাসেম ফুডসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং শ্রমিক হতাহত হয়। কিন্তু সজীব গ্রুপ কর্তৃপক্ষ কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। কারখানার যেই ভবনটিতে আগুন লেগেছে সেখানে কোনো ফায়ার এলার্ম ছিলো না এবং নিরাপদে প্রস্থানের জন্য কোনো নির্গমন পথও ছিল  না। কারখানা কর্তৃপক্ষ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সর্তকতা উপেক্ষা করেছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স বিভাগ থেকে অগ্নি নিরাপত্তা প্লান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসেম ফুডস কর্তৃপক্ষ এই অগ্নি নিরাপত্তা প্লান অনুসরণ করেনি।’

গোলাম ছরোয়ার আরো বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সজীব গ্রুপের কারখানায় কর্তৃপক্ষের আইন লঙ্ঘন, শিশু শ্রমিক নিয়োগ, অনিরাপদ কর্মসংস্থান, বিপদজনক কর্মপরিবেশ বজায় রাখাসহ কোম্পানির ধারাবাহিক নানা অপরাধমূলক অনিয়ম ও অবহেলার কারণে এই শ্রমিক হত্যাকাণ্ড ঘটানোর বিষয়ে সজীব গ্রুপ ওয়ার্কার্স জাস্টিস কমিটির বক্তব্য নিশ্চিত করেছে ও প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার সজীব গ্রুপের কারখানাটিতে কী ঘটেছিলো। এখন সবার জানা দরকার কেন উক্ত কারখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োজিত ছিল? কেন সেখানে অনিরাপদ কর্মসংস্থান ছিল? সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কেন সজীব গ্রুপের কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শোভন কাজ নিশ্চিত করতে পারেনি? কেন সজীব গ্রুপ কর্তৃপক্ষ তাৎপর্যপূর্ণভাবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নিয়ম-কানুন আইন ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করেছে? কেন হাসেম ফুড কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের অগ্নি নিরাপত্তা প্লান বাস্তবায়ন করেনি?’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি বিষয়গুলো শ্রমিকের অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উত্তর জানা দরকার। সুতরাং সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান এই জরুরি বিষয়গুলোর উত্তর খুঁজে বের করার জন্য অধিকতর তদন্তের ব্যবস্থা করা।’

গোলাম ছরোয়ার বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের নিহত ও আহত তথা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাই। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে যথাযথ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি হাসেম ফুডসে কর্মরত সব শ্রমিকে বকেয়া বেতন, বকেয়া ওভারটাইমসহ তাঁদের প্রতি মাসের বেতন পরিশোধ করার দাবি জানাই।’

গোলাম ছরোয়ার আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, সজীব গ্রুপের অন্য কারখানায় নিহত শ্রমিকের পরিবারের সদসের কর্মসংস্থানের আগে সজীব গ্রুপের সব কারখানায় বিপদজনক কর্মপরিস্থিতি, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বাংলাদেশ শ্রমআইন এবং শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন ও তাদের অপরাধমূলক অবহেলার বিষয় স্বচ্ছ তদন্ত করার জন্য পুনরায় সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’

গত ৮ জুলাই হাসেম ফুডস লিমিটেডের অধীন সেজান জুস কারখানায় ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫৪ জন শ্রমিক নিহত এবং অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন। ওই ঘটনায় সেখানে কর্মরত শিশুসহ অনেক শ্রমিক এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করছে ভুক্তভোগী শ্রমিক পরিবারগুলো।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker