ক্রমেই বেড়ে চলা জ্বালানি সংকট কাটাতে ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে, সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে ডিজেলচালিত দেশের সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র।
আর মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে বিদ্যুতের এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং। পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন বন্ধ থাকবে পেট্রোল পাম্প। চিন্তা করা হচ্ছে অফিসের কর্মঘন্টা কমিয়ে আনার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
দেশে ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় এক হাজার ২৮৬ মেগাওয়াট। পিক আওয়ার মানে বেশি চাহিদার সময় বেশি খরচের এই কেন্দ্রগুলো চালানো হতো।
এদিকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে দেশে শুধু ডিজেল সরবরাহে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের দৈনিক লোকসান প্রায় একশ কোটি টাকা।
এই লোকসান নিয়ন্ত্রণে আনতে সোমবার থেকে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ইউক্রেনের যে যুদ্ধ চলছে, সেই যুদ্ধ কিন্তু আমাদেরও যুদ্ধ। ওই যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে আমাদের ওপর।
তিনি আরো বলেন, উৎপাদনকে কমিয়ে খরচ যাতে সহনশীল হয়, সে পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ডিজেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত স্থগিত করলাম, তাতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।
এর আগে বিশ্ববাজারে আমদানি করা গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে সরকার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদনও কমিয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যুতের মোট উৎপাদন কমে যাবার কারণে, মঙ্গলবার থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। এতে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা এবং কোনো কোনো জায়গায় দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে।
তৌফিক-ই-ইলাহী জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লোডশেডিং হতে পারে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত।
সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং সেটি আগেই জানিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হবে। পরে পরিস্থিতি বুঝে ভিন্ন রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এছাড়া বাসা বাড়ির এসির তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রাখাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া অন্য সময় এসি বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারাদেশে একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে বন্ধ রাখা হবে, সেটা পরে জানানো হবে।
শুধু তাই নয়, বন্দর এলাকায় সপ্তাহে দুই দিন পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলেও জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের লোকসান কমাতে সপ্তাহে একদিন করে পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা হবে। বিশ্ব বাজারের জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা সংক্রমণের পিক সময়ের হোম অফিস চালু করা ও কর্ম ঘন্টা কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ যাবে।
নসরুল হামিদ জানান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি–বেসরকারি অফিস ভার্চ্যুয়ালি করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি অফিসগুলোয় কীভাবে সময় কমিয়ে আনা যায়, সেটাও ভাবা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই সংকট মোকাবিলায় দেশের মানুষকে ধৈয্যের সাথে সহযোগিতা করারও আহবান জানান প্রতিমন্ত্রী।