জাতীয়

প্রবল চাপেও নিরপেক্ষ থাকায় বাংলাদেশের প্রতি রাশিয়ার কৃতজ্ঞতা

জাতিসংঘের জরুরি অধিবেশনের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকালে রাশিয়ার দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনের এক প্রস্তাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে বাংলাদেশ।

এ অবস্থানকে রাশিয়া কীভাবে মূল্যায়ন করে, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, জাতিসংঘের জরুরি অধিবেশনে ভোটাভুটির আগে বাইরের প্রবল চাপ সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখায় আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ওই প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ আচরণের প্রশংসা করে রাশিয়া।

এসময় আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি আরও বলেন, ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা শুধু রাশিয়ার একার নয়, বাংলাদেশসহ দেশটির মিত্রদের জন্যও হুমকি তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে নির্বিঘ্নে মহামাত্রিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা ও লেনদেন অব্যাহত রাখতে বার্টার বাণিজ্যের পাশাপাশি তৃতীয় দেশের ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণের মতো নানা বিকল্প নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ-রাশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতায় প্রভাব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, আমরা বুঝতে পারি, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব কাজ নির্ধারিত সময় ধরেই এগোচ্ছে। কাজেই প্রকল্প শেষ করার জন্য আগে যে সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী তা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পাশ্চাত্যের মিত্ররা সুইফট ব্যবস্থার ওপর রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার লেনদেনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, গত সপ্তাহে মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাস বার্টার বাণিজ্যের (পণ্যের বিনিময়ে পণ্য, যা বার্টার বা কাউন্টার ট্রেড নামে পরিচিত) বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি এটুকু বলতে পারি, দুই দেশ ব্যবসা ও লেনদেন অব্যাহত রাখার স্বার্থে বার্টার, এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের মুদ্রা বিনিময় (রুবল ও টাকার মধ্যে) এবং তৃতীয় দেশের ব্যাংক ব্যবহারের মতো বিকল্প বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জানান, রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য কমানো নয়, বাড়াতে আগ্রহী। এ মুহূর্তে পশ্চিমা অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের সরকারের চাপে রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশের অংশীদারদের জন্য অবিশ্বস্ত অংশীদাররা দূরে সরে গিয়ে এক দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে।

রাশিয়া থেকে কেনা গম ও জ্বালানির দাম বাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, একটা বিষয় স্পষ্ট করেই বলছি, সরবরাহের বিষয়ে রাশিয়ার যে বাধ্যবাধকতা, সেটা পূরণ করা হবে। বাড়তি চাহিদা নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী ও কিছু গণমাধ্যম জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ায় এখানে পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ও বেলারুশের ওপর সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে সারের মূল্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। সারা বিশ্বে পটাশ সারের প্রধান জোগানদাতা রাশিয়া ও বেলারুশ, যা কৃষির অন্যতম প্রধান উপাদান।

পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে দমিয়ে রাখতে পারবে না উল্লেখ করে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামবে না। ইতিহাসের নানা পর্বে সংকট মোকাবিলা করেই রাশিয়া এগিয়েছে। এখনকার পরিস্থিতি ভালোভাবে মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াবে রাশিয়া।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker