তথ্য ও প্রযুক্তি

সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি

একবিংশ শতাব্দির মানুষের জীবন যাত্রাকে পাল্টে দেওয়ার মত একটি আবিষ্কার হলো স্মার্টফোন। যা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দ্রুত ডেভেলপমেন্ট প্রযুক্তির একটি। প্রতিনিয়তই স্মার্টফোনগুলোতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ফিচার যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে করছে সহজ থেকে সহজতর।

স্মার্টফোনের উপর মারাত্মক নির্ভরশীলতা একে আমাদের নিত্যদিনের জীবনসঙ্গীরুপে পরিণত করেছে। এজন্য স্মার্টফোন ছাড়া আধুনিক জীবনযাপন এখন আর কল্পনাও করা যায় না। যোগাযোগ, শিক্ষা, তথ্য ব্যবসা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। স্মার্টফোনের অপরিসীম প্রয়োজনীয়তা একে বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বের সুযোগ সুবিধা লাভের প্রধানতম হাতিয়ারের স্বীকৃতি দিয়েছে। 

বর্তমানে পৃথিবীর ২৫০ কোটির বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করছে এবং আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। যার ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা। তেমনি এর সাথে পাল্লা দিয়ে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

তবে বাজারে থাকা কয়েকশত স্মার্টফোন কোম্পানির সবগুলোই যে মানসম্মত ফোন তৈরি করছে তা কিন্তু নয়। মানসম্মত স্মার্টফোন তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হয় গবেষণা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার। সব স্মার্টফোন কোম্পানি গুলোর ক্ষেত্রে যা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এখানে গবেষণা, ফিচার, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিশ্বের সেরা 10 স্মার্টফোন কোম্পানির তালিকা দেয়া হলো-

১. স্যামসাং (Samsung)

 দক্ষিণ কোরিয়ার এ কোম্পানিটি গোটা বিশ্বের স্মার্টফোন বাজারে এক নম্বর স্থান দখল করে রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্যামসাং। সকলে চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিশ্বের শীর্ষ এ কোম্পানিটি উচ্চমূল্য থেকে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন তৈরি করছে। স্যামসাং স্মার্ট ফোনটি মূলত এর গ্যালাক্সি সিরিজের জন্য পরিচিত।  গ্যালাক্সি সিরিজের ফ্লাগশিপ ফোনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্যামসাং এস৭ ইডিজিই+ এবং গ্যালাক্সি নোট ৭। 

বর্তমানে স্যামসাং এর অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনগুলোর বিকল্প হিসেবে নতুন একটি অপারেটিং সিস্টেম ডেভলপ করছে। এছাড়াও স্যামসাং এর বেশিরভাগই স্মার্টফোনগুলোতে নিজেদের তৈরি প্রসেসর এক্সিনোস ব্যবহার করে থাকে। 

এ স্মার্টফোন কোম্পানিটি  এবছর প্রায় 315 মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। যা থেকে তাদের প্রফিট দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯ শত ৪৭ মিলিওন ডলারে। একই সাথে 20 শতাংশ শেয়ার ধরে রেখে কোম্পানিটি বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন কোম্পানির  তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

২. অ্যাপল (Apple)

অসাধারণ নকশা, ফিচার এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে অ্যাপেল স্মার্টফোন কোম্পানিটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় একটি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। আর এসব উন্নত সুবিধার কারণে বর্তমানে এ স্মার্টফোন কোম্পানি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জায়গা দখল করে নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ২২ টি দেশে ৪৯৯ টির মত বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে এই কোম্পানির।

সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে বাজারে প্রথম জেনারেশন আইফোন নিয়ে আসে এ কোম্পানিটি। অ্যাপলের রয়েছে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম, যা অ্যাপল কে যে কোনো এন্ড্রয়েড ফোনের সাথে প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে রাখে। বর্তমানে আইফোনকে সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ ব্র্যান্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বে প্রচুর পরিমাণ মানুষ আছে যারা আইফোনকে তাদের পছন্দের চাহিদার শীর্ষে রাখে। 

এ বছরে এই কোম্পানিটি ২১৫ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৩৫ মিলিওন ডলার এবং কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমান ছিল ৪৮ হাজার ৩৫১ মিলিওন ডলার। 

৩. হুয়াওয়ে (Huawei)

 উদ্ভাবনের দিক থেকে বর্তমানে হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি স্মার্টফোন কোম্পানি। হুয়াওয়ের অসাধারন উদ্ভাবনী ক্ষমতা একে খুব দ্রুত বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলোর একটিতে পরিণত করেছে। উদ্ভাবন ও গবেষণা ক্ষেত্রে 2016 সালে কোম্পানিটি তার আয়ের ১৬ শতাংশ ব্যয় করেছে। বর্তমানে হুয়াওয়ে ১০০ টিরও বেশি দেশে তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম পরিচালনা করে আসছে। বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন কোম্পানি হিসেবে 2018 সালে হুয়াওয়ে লেইকা ট্রিপল ক্যামেরা যুক্ত ফোন পি ২০ ও পি ২০ প্রো বাজারে নিয়ে আসে। এ ফোনটিতে থাকা উন্নত ক্যামেরার কারনে অসাধারন ছবি তুলতে পারে ও একই সাথে ৫০ গুন পর্যন্ত জুম করা সম্ভম হয়। 

২০২০ সালে এ স্মার্টফোন কোম্পানিটি ১৫২ মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। যার বাজার মূল্য ৮৭ হাজার ৬৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কোম্পানিটির মুনাফা অর্জনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৯০ মিলিওন মার্কিন ডলারে। 

৪. অপো (Oppo)

গ্রাহকদের চাহিদা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাজারে স্বল্পমূল্যে উন্নত ক্যামেরার ফোনগুলো নিয়ে এসে স্মার্টফোনের বাজারে জায়গা দখল করে নিয়েছে এ ব্রান্ডটি। স্বল্পন্নোত দেশগুলোতে ও বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে এ ব্রান্ডটি দারুন জনপ্রিয়। উন্নত মানসম্মত পণ্যের স্মার্ট প্রচার প্রচারনা ও ব্রান্ডিং এর কারণে স্মার্টফোন কোম্পানিটি শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। 

এ বছরে কোম্পানিটি ১১১ মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রয় করেছে যার বাজার মূল্য ৬০ হাজার মার্কিন ডলার এবং  এ থেকে ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা অর্জন করেছে। 

৫. ভিভো (Vivo)

 সর্বপ্রথম ২০১৭ সালে  স্মার্টফোন বিক্রিতে ১০.৭ শতাংশ শেয়ার দখল করে আলোচনায় আসে ভিভো কোম্পানিটি। বিজ্ঞাপনে সেলিব্রেটিদের নিয়ে আসা, স্মার্ট প্রচার-প্রচারণা এবং স্পন্সরশীপের কারণে কোম্পানিটি অ্যাপল,স্যামসাং ও হুয়াওয়ের এর মত কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতা করার মত সামর্থ্য রাখছে। 

অ্যাপলের আইফোন এক্স এর মতো নচ ডিসপ্লের ফোন সর্বপ্রথম বাজারে নিয়ে এসে আলোড়ন সৃষ্টি করে এ কোম্পানিটি। এমনকি এন্ড্রয়েড ফোনের মধ্যে সর্বপ্রথম নচ ডিসপ্লেযুক্ত ফোন বাজারে নিয়ে আসার কৃতিত্ব ভিভোর। 

২০২০ সালে কোম্পানিটি 95 মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। যার বাজার মূল্য ৪৬ হাজার ৪৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এ থেকে কোম্পানিটির আয় ১ হাজার ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

৬. শাওমি (Xiaomi)

শাওমি বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম মোবাইল মেনুফেকচার কোম্পানি। শাওমির ফ্লাগশিপ ফোন রেডমি এবং এমআই (MI) বিশ্বজুড়ে প্রচুর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। কম দামে অসাধারণ ফিচার, ক্যামেরা ও উন্নত প্রসেসরের ফোনের কারণে বর্তমানে এ ব্রান্ডটি ব্যাপক আলোচিত ও জনপ্রিয়। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে এ স্মার্টফোন কোম্পানিটির জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ২০১৯ সালে স্মার্টফোন বাংলাদেশের এক নম্বর মোবাইল ব্র্যান্ড এর জায়গা দখল করে নিয়েছিল এ প্রতিষ্ঠানটি। 

এছাড়াও কোয়ালিটি পণ্য ও গবেষণার দিক থেকেও কোম্পানিটি প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। কোয়ালিটি ও দাম বিবেচনায় সিঙ্গাপুর, চায়না, ব্রাজিল, তুর্কি, ভারত এ দেশগুলোতে এ স্মার্টফোনটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।  এবছর কোম্পানিটি ৯৫ মিলিয়ন স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। যার বাজার মূল্য ১৭ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কোম্পানিটির লভ্যাংশ পরিমাণ ছিল ১ হাজার  মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

৭. এলজি (LG)

এলজি মূলত রেফ্রিজারেটর এবং এয়ার কন্ডিশনার  প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে বিখ্যাত। কিন্তু এলজি এসব ছাড়াও উন্নত ফিচারের এন্ড্রয়েড ফোন প্রস্তুত করে থাকে। এলজির প্রিমিয়াম স্মার্টফোন ব্রান্ডগুলো হলো K-সিরিজ, J-সিরিজ, এলজি ট্রিবিউট, ফ্লেক্স, নেক্সাস ইত্যাদি। এসব ফোনগুলোতে অত্যাধুনিক ক্যামেরা ফিচার, অটো ফোকাস ও নয়েস রিডাকশন এর মত আরও অনেক প্রযুক্তি যুক্ত করা আছে।

২০২০ সালে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন স্মার্টফোন বিক্রি করে কোম্পানিটি ১১০ মিলিয়ন মুনাফা অর্জন করে।

৮. লেনেভো (Lenevo)

 খুব দ্রুত বিশ্বের ১৬০ টিরও বেশি দেশে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে লেনেভো শীর্ষ স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। লেনেভোর জনপ্রিয় স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো P, K, A সিরিজ এবং Zuk ও VIBE। “Different is Better” স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এ স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি।

এ বছরে ৫০ মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করে কোম্পানিটি প্রায় ৫৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে।

৯. জে টি ই (ZTE)

 ZTE মূলত তার স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ও কমিউনিকেশন যন্ত্রাংশ বিক্রির জন্য বিখ্যাত। এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ১৪০ টি দেশে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।গত বছর ৪৫ মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি ৭১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লভ্যাংশ উপার্জন করেছে।

১০. এলকেটেল লুসেন্ট (Alcatel Lucent)

এ স্মার্টফোন কোম্পানিটিকে ২০১৬ সালে নোকিয়া অধিগ্রহণ করলেও বর্তমানে পূর্বের নামেই ব্যবসা করে যাচ্ছে। ওয়ান টাচ সিরিজের কারণে কোম্পানিটি অনেক পপুলার। ক্রেতাদের চাওয়া-পাওয়া কে গুরুত্ব দিয়ে বেশ কয়েকটি সিরিজের স্মার্টফোন বাজারে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এগুলোর মধ্যে Pixi, Idol, Pop অন্যতম। সর্বশেষ ২০ মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker