২৪শে জুন, ১৯৮৭, রোজারিও, আর্জেন্টিনা। রাত ৮টা বেজে ২০ মিনিট। চে গুয়েভারার জন্মস্থানে জন্ম নিলো একটা ছোট্ট শিশু। নাম রাখা হলো, “লিওনেল মেসি”। ছোট বাচ্চাটাকে দেখে কেউ বুঝতেও পারেনি, তারা কার জন্ম দেখলেন! ১৬ নভেম্বর, ২০০৩, পোর্তো বনাম বার্সেলোনা, ৭৫ মিনিট, বার্সেলোনার সাবস্টিটিউশন। ফার্নান্দো নাভারো উঠে গেলেন, নামলো ১৬ বছরের এক কিশোর। জার্সি নাম্বার ১৪, ক্রুইফের জার্সি নাম্বার। নামলেন “লিওনেল মেসি”। সেদিন স্টেডিয়ামে বসা হাজারও দর্শকরা কি জানতেন! তারা একজন সম্রাট রাজত্বের এক ফুটবল ঈশ্বরের অভিষেক দেখলেন? ১৬ অক্টোবর, ২০০৪, কাতালান ডার্বি, এস্পানিওল বনাম বার্সেলোনা। ৮২ মিনিট, বার্সেলোনার সাবস্টিটিউশন, চতুর্থ রেফারির হাতের স্ক্রিনে ২০ আর ৩০। ২০ নাম্বার জার্সির পর্তুগীজ মিডফিল্ডার ডেকো উঠে গেলেন। আর মাঠে নামলেন ৩০ নাম্বার ঢোলাঢালা জার্সি পরা ক্ষুদ্রাকৃতি এক কিশোর। নাম:- “লিওনেল মেসি”। জার্সিটা সেদিন বড় ছিলো, চাপটা আরও বেশি। নামলেন সেগুলো নিয়েই। সেদিন এনোয়েটায় বসে থাকা অজস্র দর্শক কি জানতো! তারা একটা যুগের শুরু দেখলেন। জন্মের সময় তাকে দেখে কেউ ভাবেনি, তিনি হবেন সীমাহীন সম্রাট। ১৪ আর ৩০ নাম্বারের ঢোলাঢালা জার্সিগুলো পড়ে নামার সময়ও কেউ কল্পনাও করেনি, তিনি হবেন তার সময়ের একচ্ছত্র অধিপতি, তিনি হবেন ফুটবলীয় ঐতিহাসিক, আর তিনিই হবেন ফুটবলের সবচেয়ে বড় রাজা। যার পায়ে রচিত হবে ফুটবলের এক নতুন যুগ। না, কেউ ভাবেনি। কিন্তু তিনি করে দেখিয়েছেন। হ্যাঁ, তিনি পেরেছেন। তিনি “লিওনেল আন্দ্রেস মেসি”। শত শত ফুটবল বোদ্ধার মন্তব্যকে হঠাৎ করে অমূলক বানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ব সেরা ডিফেন্ডারদের নামিয়ে এনেছেন সাধারণদের কাতারে, মাষ্টার মাইন্ড কোচদের ট্যাকটিক্সকে বানিয়ে ফেলেছেন হাস্যকর, ছিটকে ফেলেছেন মার্কারদের, সময়ের সেরা গোলকিপারদেরকে স্থির বানিয়ে রেখে গোলের পর গোল করেছেন, তাকে ঘিরে বানানো ডিফেন্স জোনকে গুড়িয়ে দিয়ে মুহূর্তেই অপ্রস্তুত করে ফেলেছেন, পুরো স্টেডিয়ামকে উল্লাসে মাতিয়েছেন, থামিয়ে দিয়েছেন জনতার উন্মত্ত উল্লাস, ভেঙ্গে দিয়েছেন একের পর এক রেকর্ড। তিনি “লিওনেল মেসি”। রোনালদিনহোর স্কিল, জিদানের বল কন্ট্রোল, পেলের ফিনিশিং, ক্রুইফের ফুটবল মাঠের অবিশ্বাস্য বুদ্ধিমত্তা, ম্যারাডোনার সিল্কি রান, রোনালদোর মত হঠাৎ করেই ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলা এক্সেলারেশন, উইং এ জর্জ বেস্ট, ক্যান্টোনাদের চেয়ে বেশি গতি নিয়েই “লিওনেল মেসি”। মাঠে প্রতিপক্ষ তাকে আটকাতে চেষ্টা করলে, বেরিয়ে আসেন অবিশ্বাস্য দক্ষতায়, অবিশ্বাস্য ক্ষমতায়। ফুটবলটা যেন তার পায়ে লেগে থাকে আঠার মতো। দলের জন্য নিজের ভার্সাটাইলিটিকে সর্বোচ্চতে নিয়ে যাওয়া খেলোয়াড়ও “লিওনেল মেসি”। দলের প্রয়জোন মতো খেলেছেন লেফট উইং, রাইট উইং, সেন্টার ফরওয়ার্ড, ফলস নাইন হিসেবে। দলের উপর চাপ পরলে পড়ে থাকেন ডিফেন্সে। মাঝখানে লুইস এনরিকের ট্যাকটিক্স এ ট্রানজিশনাল প্লে তে খেলেছেন রাইট ব্যাক এ। এখনতো খেলোয়াড়ের অভাব পূরণ করতে হয়ে যাচ্ছেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারও। পাসের পর পাস খেলতে খেলতে হঠাৎ করে দিয়ে দেন কয়েকটা কিলার পাস। হয়তো মাটি ঘেষেই, নয়তো বা বাতাসে ভাসিয়ে। দলের জন্য নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করা, শুধুমাত্র লিওনেল মেসির পক্ষেই সম্ভব। প্লেয়ারকে হঠাৎ বোকা বানিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া, বিপক্ষ দলের বেশ কয়েকজন প্লেয়ারকে কাটিয়ে ফাঁকি দিয়ে একা গোল করা, শুধুমাত্র ফুটবলের রাজা, ফুটবল ঈশ্বর লিওনেল মেসির পক্ষেই সম্ভব। নিজের ফ্রি কিক টেকিং কে উন্নত করতে, সেখানেও হয়ে গেছেন বিশ্ব সেরা। একসাথে বিশ্বের সেরা গোলস্কোরার, সেরা এসিস্ট মেকার, সেরা পাসার, সেরা ফ্রি কিক টেকার হওয়া শুধুমাত্র একজনের পক্ষেই সম্ভব। তিনি “লিওনেল মেসি”। শুধুমাত্র “লিওনেল আন্দ্রেস মেসি”। অনেকেই বলে, সর্বকালের সেরা হতে তোমার আন্তর্জাতিক ট্রফি লাগবে। নিজেও জেদ ধরেছো বাচ্চার মতো, নিজের সবকিছুর বিনিময়ে দেশকে ট্রফি এনে দিতে। কিন্তু তুমি কি ভুলে গেছো? তোমার পায়েই রচিত হয়েছে ফুটবলের এক নতুন যুগ। তুমি না থাকলে, কে দেখাতো পায়ের এই অবিশ্বাস্য যাদু? শুধুমাত্র তোমার জন্যই তো আজ এতো মানুষের কাছে ফুটবল প্রিয়। যখন তুমি কোনো আন্তর্জাতিক ফাইনাল খেলতে নামবে, তখন মনে রাখবে, ঐ সামান্য ট্রফি তোমাকে সর্বকালের সেরা হওয়া থেকে আটকাতে পারবে না। কেই-বা কিভাবে আটকাবে! তুমিতো ভিন্ন গ্রহের ফুটবলার, তুমিতো ফুটবলের একমাত্র রাজা, আর ফুটবলে কোনো ঈশ্বর থাকলে, তুমিই সেই একমাত্র ঈশ্বর। যা কেউ কখনো হতে পারেনি। তাহলে কেই-বা কিভাবে তোমাকে আটকাবে! কোটি কোটি মানুষ যখন তোমার কোনো আন্তর্জাতিক ফাইনাল দেখতে দেখতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবে ওই সোনালী ট্রফিটা তোমার হাতে ওঠার জন্য, তখন আমিও হয়তো তাই করবো। ঈশ্বর যদি পাথর হৃদয় হয়ে থাকেন, তবে হয়তো তিনি কোনো ট্রফি উঠাতে দেবেন না তোমাকে। কিন্তু আমার বিশ্বাস ঈশ্বরেরও আবেগ আছে, তিনিও তোমাতে মুগ্ধ, তিনিও লিওনেল মেসিতেই মজে আছেন। তিনিও চাইবেন, সর্বকালের সেরা হতে তোমার পথের এই ছোট্ট কাঁটাটা সরিয়ে দিতে। কিন্তু মনে রেখো মেসি, আমার কাছে ঢোলাঢালা ১৪ নাম্বার জার্সি পড়ে অভিষিক্ত হওয়া সেই ছোট্ট ছেলেটাই সর্বকালের সেরা, ফুটবল মাঠের অবিসংবাদিত অধিপতি, ফুটবলের একমাত্র রাজা, ফুটবলের একমাত্র ঈশ্বর, আমার ফুটবলের ভালবাসা। তুমিই আমার ফুটবলীয় ভালবাসার উৎস।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.