যশোর

দীর্ঘ ৯দিন ছুটির ফাঁদে বেনাপোল স্থলবন্দর

সাপ্তাহিক ছুটি, মে দিবস ও ঈদ-উল-ফিতর এর ছুটির কারনে টানা ৬ দিন ও ফাঁকে একদিন অফিস হয়ে আবারো ২দিন সাপ্তাহিক ছুটিতে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। এর ফলে স্থবির হয়ে পড়বে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম।

দেশের অর্থনীতিতে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ৯০ ভাগই আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। মাত্র সাত দিনের এলসিতে পণ্য আনা যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮১ কিলোমিটার। কোলকাতা থেকে আড়াই ঘন্টায় চলে আসা যায় চেকপোস্টে। সে কারণে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানির জন্য বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে থাকেন। লম্বা ছুটিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পড়বে বিরুপ প্রভাব। এমনিতেই বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট লেগেই আছে। লম্বা ছুটির কারনে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাঁচামালের সংকট দেখা দিতে পারে। সীমান্তের দু‘পাশের ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ছুটিতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, আজ বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল থেকে বন্ধ হয়ে যাবে বেনাপোল-পেট্রাপোলের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি। কাস্টম ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিজ নিজ বাড়িতে ঈদ করতে রওয়ানা দিবেন। তারপর সরকার ঈদের তিন দিন আগে পরে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখায় বন্দর থেকে কোন পণ্য খালাসও হবে না। অনেক আমদানিকারক ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বাড়িতে যাবেন। তারা ঢাকা ফিরে না আসা পর্যন্ত কোন পণ্যও খালাস নিবে না। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ৫ মে ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন সে কারণে সব মিলিয়ে ৯ দিন ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে বেনাপোল বন্দর। আগামী ৮ মে থেকে পুনরায় বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম সচল হবে বলে তিনি জানান।

দু‘দেশের সিএন্ডএফ এজেন্টস ও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হবে। শুক্র ও শনিবার (২৯, ৩০ এপ্রিল) সাপ্তাহিক ছুটি, ১ মে শনিবার মহান মে দিবস ও ২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে বন্ধ থাকবে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম। ৫ মে বৃহস্পতিবার আমদানি-রপ্তানি চালু হবে। কাস্টমস ও বন্দর খুললেও কোন পণ্য খালাসের সম্ভাবনা নেই। এরপর ৬,৭ মে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৭ মে আমদানি-রপ্তানি চালু হলেও কাস্টমস বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সে হিসেবে রবিবার (৮ মে) থেকে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে এ বন্দরে। ওইদিন সকাল থেকে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম চলবে।

এদিকে টানা ছুটির কারনে সীমান্তের দু‘পাশের বন্দরে ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বেনাপোলের মতোই পেট্রাপোল বন্দরেও ট্রাকজট রয়েছে। বন্দরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল, পেট্রাপোল পার্কিং ও কালীতলা পার্কিং টার্মিনালে কয়েকশ পণ্য বোঝাই ট্রাক অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়। ৫ ও ৭ মে কিছু পণ্য বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করলেও দীর্ঘ ছুটির কারণে অনেক পণ্য পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল বন্দরে ঢুকবে ছুটি শেষে।

বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু জানান, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারনে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক থাকবে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত। এ সময় একটু বেশি ভিড় হয়ে থাকে। সে কারণে ইমিগ্রেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, ২৮ এপ্রিল বিকেল থেকে ঈদের ছুটি হয়ে যাচ্ছে। ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ৫ ও ৭ মে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হলে সে পণ্য আনলোড করা হবে। ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দরে যাতে কোন ধরনের নাশকতামূলক বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা দিনে রাতে বন্দর এলাকায় টহল দিবে। পাশাপাশি বেনাপোল পোর্ট থানা কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি বলা হয়েছে। আগামী ৮ মে থেকে বন্দরের কর্মতৎপরতা বাড়বে।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম রসুল বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দর এলাকায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ও দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য বিশেষ নজরদারি নেওয়া হয়েছে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker