কিশোরগঞ্জ

কৃষিযোদ্ধারা কিশোরগঞ্জের অহংকার

“ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় আমাদের এ বসুন্ধরা,

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সৌন্দর্যে মন কাড়াঁ”

এদেশের অধিকাংশ লোকই কৃষক। তাই এদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা প্রায় ৮০ জন লোকই কৃষি পেশার সাথে জড়িত। এমনকি বাঁকি ২০ জনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। এজন্য এদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কৃষিকেন্দ্রিক। কৃষি ব্যবস্থা উন্নতি ও অবনতির উপরই সারা দেশ তাঁকিয়ে থাকে। অথচ এই কৃষিব্যবস্থার কান্ডারী যারা, সেই কৃষক সমাজই আজ অনাদৃত, লাঞ্ছিত ও উপেক্ষিত অবহেলিত জীর্ন শীর্ণ জীবন সম্পন্ন।

কাব্যের ন্যায় বলা চলে –

“ভোরের সূর্য উকি দিতে,

সোনার কৃষক সবজি ক্ষেতে,

শুভ্র কুয়াশায় মাখিয়েছে অঙ্গ,

ঢেউ খেলে যায় সূর্যালোক তরঙ্গ।

কিশোরগঞ্জ তথা বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জুড়ে আছে এদেশের কৃষি ও কৃষক। এদেশের যে সকল সোনার মানুষেরা দিনের পর দিন পরিশ্রম করে আমাদের সারা দেশের খাদ্য শস্যের জোগান দিয়ে থাকেন তারাই হলেন কৃষক। বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো হচ্ছে কৃষিভিত্তিক। আর কৃষি কাজ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তারাই হলেন কৃষক। কৃষককুলের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে, ত্যাগে, ঘামে গড়ে উঠেছে এ দেশের অর্থনীতি। দুঃখ দারিদ্র, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করে তারা যেভাবে দেশের ও দশের সেবা করে যাচ্ছে তার তুলনা নেই। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এদেশ ভরে উঠে ফসলের সমারোহ, আর আমরা পাই ক্ষুধার অন্ন। কৃষকের উৎপাদিত কাঁচামাল বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ হয় বৈদেশিক মুদ্রায়, সম্ভব হয় শিল্পায়ন। তাই এদেশের অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো কৃষি ও কৃষক।

কবির কাব্যে ফুটে উঠে –

“ভোর না হতেই লাঙ্গল কাঁধে, মাঠ পানে কে যায়।

সে আমাদের গাঁয়ের কৃষক, বাস আমাদের গায়”।

বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে এমনই কৃষকের বাস। ভোরের আলো ফুঁটতে না ফুঁটতেই, প্রতিটি কৃষক লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে মাঠ পানে ছুটতে থাকে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে সে ফসল ফলায়। ভোরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে তার এই পরিশ্রম। এভাবেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিটি কৃষক আমাদের জন্যই উৎপাদন করে যাচ্ছে খাদ্য শস্য ও অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্য।

জানা যায়-অধিকাংশ কৃষকের জীবন মানবেতর, অনেক কৃষকের জীবন দুঃখ কষ্টে ভরপুর। অভাব তার নিত্য দিনের সঙ্গী। সে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কঠিন পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলায়। অতীতে গ্রাম বাংলার কৃষকদের জীবন সুখী ও শান্তিময় ছিল। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ আর স্বাস্থবান কৃষক ছিল বাংলার সাধারণ দৃশ্য। সারা বছর খেয়ে পরেও কৃষকের ঘরে খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকত।  তখন তাদের জীবনযাত্রা ছিল সহজ সরল। তারা তাদের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান অনায়াসে করতে পারতো বলে পূজা-পার্বণে এবং ঈদ উৎসবে তাদের আনন্দের সীমা থাকত না।

বর্তমানে কৃষককুলের জীবনমান নমনীয়, কৃষি ক্ষাতের উপার্জিত অর্থ উদ্ধৃিত থাকেনা। যারা বর্গা কৃষক তাদের টানাপোড়নের জীবন অন্তহীন দুঃখ ভারাক্রান্ত। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে কথা বলেছিলাম একাধিক কৃষিজীবি সোনার মানুষ  জনের সাথে।

তাদের ভাষ্যমতে চাষাবাদে এখন আর আগের মত লাভ নেই। সাংসারিকভাবে কৃষিজাত পণ্যের চাহিদা মেটানোর জন্যই কৃষি তৎপরতায় জুড়ে আছে অধিকাংশ কৃষক।

ছবিতে দৃশ্যমান কোমল কৃষকগুলি হোসেনপুরের একটি গ্রামে আমাদের নজরে পড়ে, মরিচ ক্ষেত নিড়াচ্ছেন  সোনার ফসল ফলানো কৃষকেরা আর আপন মনে কাওয়ালী গান শুনছেন মোবাইল ফোনে, কিছুক্ষণ পর পর ঠোঁটের শোভা বাড়াচ্ছে আকিজ বিড়ি। টানটান সূর্যালোক ভূ- পৃষ্ঠে আঁচড়ে পরা শুরু শীতল ভাব। কিছু মুহুর্তেই নেমে আসবে রজনীর অস্তিত্ব। অপার সন্ধার ঘনঘটা হয়তো কিঞ্চিৎ পরেই আবির্ভাব হবে, দিনের ক্লান্তি লগ্ন প্রায় সমাপ্তি।

মরিচ একটি অর্থকরী ফসল,বলা যায় “জাল ছারা রুচি আকাল” সুস্বাদু তরকারীতে জাল যেন অষ্টগুনী, দেবতার হাতের প্রস্বাদ বা বুজুর্গানে দ্বীনের শুদ্ধ্য মুখের সিদ্ধি বাক্য মরিচ দিলে পূর্ন স্বাদ তরকারিতে ঢেউ খেলবেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মরিচের ঝাল ধরে রাখে তারুণ্য, ক্যান্সার দমনে সহায়তা করে এবং হৃদপিণ্ড ভালো রাখে। তাই তাদের মতে, দীর্ঘদিন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে হলে মরিচ খান। কাঁচা মরিচে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরকে অন্যান্য রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে দূরে রাখে। কাঁচা মরিচের আঁশ পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। মরিচে থাকা ‘বিটা ক্যারোটিন’ এবং ‘ক্যাপসিকিন’ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং পেটের নানা সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আর সে কারণেই চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন একজন মানুষের সপ্তাহে তিনদিন দু’টো করে ছোট কাঁচা মরিচ খাওয়াই যথেষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় জানায়, মরিচের ঝাল নানা অসুখের ঝুঁকি কমায়, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ যা মানুষের শরীরকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে দূরে রাখতে সক্ষম। তাছাড়া হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে কাঁচা মরিচ। পরম যত্নে ভূ-পৃষ্টের বুক ছিড়ে মরিচ ফলান কিশোরগঞ্জের সোনার কৃষকেরা।

গত মৌসুমে  এক একর চল্লিশ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন। এ বছর শুধু পাচঁ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছেন মোহাম্মদ ধনু মিয়া, তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, “আমরা মইচ কইরা ঠিকমত দর পাইনা, মইচ কইরা কি করাম। ধান কইরা খরচ পাতি কম লাগে মোডামোডি পুইষা যায় তাই আগুনী (অগ্রয়নী) ধান কইরালচি বেবাগ জমিতে”

গতবছরের তুলনায় কিশোরগঞ্জে মরিচের  চাষাবাদ কিছুটা কম, এ বছর ভালো দাম পাবে বলে আশা করেন হোসেনপুরের জৈনেক কৃষক আবুল বাসার।

পুড়াবাড়িয়ার বাদল, চরকাটিহারীর সাইফুল, সাহেবের চরের মুন্তু মিয়া, চরকাটিহারীর সামিম মিয়া চরকাটিহারী ফকির বাড়ীর প্রভাস ফেরত রনি। বিশ্বনাথপুরের জাকির, পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দির মাহফুজুর রহমান, চরফরাদীর রফিকুল ইসলাম আমাদের জানান, জেলার চরাঞ্চলগুলিতে মরিচের আবাদ বেশি হয়। নিয়মিত কৃষি অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মরিচ চাষে লাভবান হতে পারে তারা। শতগুণ বেড়ে যাবে মরিচ চাষের উৎসাহ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker