Uncategorized

কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে টর্চার সেলের সন্ধান, ৫ জিম্মি উদ্ধার

কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনে জিন্মিদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের কাজে ব্যবহৃত অপহরণকারি চক্রের দু’টি ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান পেয়েছে র‍্যাব। এতে অভিযান চালিয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ পাঁচ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা ও পুলিশের এক বহিস্কৃত উপ-পরিদর্শকসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব।

শনিবার বিকেল ৩ টায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের উর্ধ্বতন সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আবু সালাম চৌধুরী। এর আগে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার মাইতুল সরকারবাড়ী এলাকার মৃত এরশাদ আলমের ছেলে এসএম ইকবাল পারভেজ (৪০), কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউনুসের ছেলে এমটি মুন্না (৩০) এবং একই এলাকার মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ (২৮)। এসএম ইকবাল পারভেজ পুলিশের বহিষ্কৃত সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। আর ইকবাল ও এমটি মুন্না সম্পর্কে আপন দুলাভাই ও শ্যালক।

উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে মো: শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম ঢাকার উত্তরা এলাকার বাসিন্দা এবং কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা এক রোহিঙ্গা দম্পতি। এছাড়া অপর একজনও কক্সবাজারের বাসিন্দা।

র‍্যাব জানিয়েছে, গত ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ইকবাল পারভেজ পুলিশের এসআই হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র‍্যাবের হাতে আটক হন। পরে দীর্ঘদিন কারাভোগের পাশাপাশি পুলিশের চাকরিও হারান।

Image

এরপর থেকে ইকবাল তার শ্যালক মুন্নাসহ সাত-আটজনের সহযোগীসহ সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্র গড়ে তোলেন। চক্রটির সদস্যরা কক্সবাজারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণ করতে আসা লোকজনকে টার্গেট করে অপহরণ করতেন। পরে তাদের জিম্মি রেখে স্বজনদের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন। জিম্মিদের স্বজনরা দাবিকৃত টাকা না দিলে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের গোপন আস্তানায় (টর্চার সেল) অপহৃতদের নির্যাতন চালাতেন। শুধু তা-ই নয়, মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত নারীদের চক্রের সদস্যরা ধর্ষণ করার পাশাপাশি যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করতেন বলেও তথ্য দিয়েছে র‍্যাব।

র‌্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক মো: আবু সালাম চৌধুরী জানান, কক্সবাজার র‌্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি চৌকস দল কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় রাতভর এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে উদ্ধার হওয়া ঢাকার মো: শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম কক্সবাজারে বেড়াতে এসে গত ১৬ মে নিখোঁজ হন। পরে একটি মোবাইল নম্বর থেকে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের তরফ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের।

তিনি জানান, কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরও করুণ। দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতেন চক্রের সদস্যরা। স্বামীর উপর চলতে তাকে মধ্যযুগীয় অমানবিক বর্বর নির্যাতন। অপহৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা বিকাশে দু’লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদেরকে ছাড়া হয়নি। স্বজনেরা বিষয়টি র‌্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা উপাত্ত ব্যবহার করে কাজ শুরু করে র‌্যাব। পরে সন্ধান মেলে দু’টি ভয়ঙ্কর টর্চার সেলের। যার একটি কলাতলী এবং অপরটি সুগন্ধা পয়েন্টে।

সন্ধান পাওয়া টর্চাল সেল দু’টির নাম ও ঠিকানা প্রকাশ না করলেও তা আবাসিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস বলে নিশ্চিত করেছে র‌্যাব।

ঘটনায় ১৯ মে অপহরণের শিকার শাহজাহান কবিরের বোন আমেনা বেগম কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। আসামি ও উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র‌্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আবু সালাম চৌধুরী।

এর আগে ২০২২ সালে আগস্ট মাসের শুরুতে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে কাটেজ এলাকায় আরও একটি ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান পেয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ। সেখানে আটকে রাখা পর্যটকসহ চারজনকে উদ্ধার করে ১১ জনকে আটকও করা হয়েছিল।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker