নওগাঁসারাদেশ

একটি সেতুর অভাবে ২ ইউনিয়নের মানুষের চরম দূর্ভোগ

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি ও খেলনা ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদীর উপর শত বছরেও নির্মিত হয়নি কোন সেতু। একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ওই এলাকার মানুষসহ স্কুল/কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের চাটায় আর বর্ষা মৌসুমে ভরা নদীতে নৌকায় পারাপার তাদের একমাত্র ভরসা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর এপার-ওপার রয়েছে ভগবানপুর, দেবীপুর, খেলনা, লালমাটি নলপুকুর, রাঙ্গামাটি বাজার, বলরামপুর, উদয়শ্রীসহ ৪০-৫০টি গ্রাম। ওই এলাকার প্রায় ৩০-৩৫ হাজার মানুষকে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নসহ উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া বা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াতের জন্য নদীর পাড়ে এসে নৌকার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হয়। নৌকায় যাত্রী কম হলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর নদী পার হতে হয় যাত্রীদের। সময়মতো ঘাটে নৌকা না থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ ও স্কুল/কলেজর শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখমো শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে নদী পার হতে না পেরে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেনা। ফলে শিক্ষার অনেক ব্যাঘাত ঘটে। খড়া মৌসুমে বাঁশের সাকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হয়।
উপজেলার চকহাড়া খেলনা ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ ক্ষোভের সাথে বলেন, ছোটবেলায় বাপ-দাদার মুখে শুনেছি এখানে ব্রিজ হবে, স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল সেতু আর ভাগ্যে হলনা। এ এলাকার মানুষের নদী পারাপার করতে কতটা যে কষ্ট করতে হয় তা বলে বুঝাতে পারবো না। এ অঞ্চলে এতগুলো মানুষ বছরের পর বছর ধরে নদী পারাপারে কতইনা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে,কিন্তু দেখার কেউ নেই। সরকারের উচিত আমাদের কষ্ঠের কথা চিন্তা করে সুনজর দেয়া। এতে আমাদের কষ্ট লাঘব হবে।

নদীর দুই ধারেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি  ক্লিনিক। নৌকা বিড়ম্বনার কারণে সময় মত অফিসে পৌঁছাতে পারেনা অনেকে। রাস্তা ঘাটসহ নদির উপর সেতু না থাকায় উৎপাদিত ফসল নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকার চাষিদের। একটি ব্রিজের অভাবে এসব এলাকার কৃষকের চাষ করা ফসল বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে হয় উল্টো পথে। হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেয়া দুষ্কর ব্যাপার হয়ে উঠে। ফলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আত্রাই নদীর উপর ব্রিজটি নির্মিত হলে ধামইরহাট উপজেলার সাথে নদী অধ্যুষিত ওইসব এলাকার কয়েক শত গ্রামসহ পাশ্ববর্তী পত্নীতলা ও সাপাহার উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। অপরদিকে  প্রতিবেশী তিন উপজেলার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে।
তালতলী ভগবানপুর ঘাটের নৌকার মাঝি আব্দুল গোফফার বলেন, প্রায় ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে নৌকায় লোক পারা-পার করে আসছি। ভরা নদীতে লোক পারাপার করতে বহুবার নৌকাডুবি হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর উপর ববাঁশের চাটার উপর দিয়ে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ছাড়া বড়ো কোনো যানবাহন পার হতে পারে না।
আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, কৃষি চাষাবাদে এ অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে। আমাদের এমপি মহোদয় শহীদুজ্জামান সরকারের নিজ উদ্যোগে আত্রাই নদীর উপরে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্রিজটি নির্মিত হলে শুধু ধামইরহাট নয় নজিপুর সাপাহারসহ তিনটি উপজেলার সাথে যুগান্তকারী মেলবন্ধনের সৃষ্টি হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন বলেন, এ ধরনের দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্য সুনিদিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রথমেই ঠিকাদারের পক্ষ থেকে একটি অফিসঘর ও একটি লেবার-শেড নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্বের মাটি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃযাচাই করা হয়েছে। এখন সেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গনপতি রায় বলেন, সেতুটির নকশা পরিবর্তন করায় এক বছরের মতো দেরি হয়ে গেছে। তবে বর্তমানে সেতুটির নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker