অর্থনীতিবেনাপোল

বেনাপোল বন্দরে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৫৬ কোটি টাকা

 দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। সেখানে আদায় করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৮১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, এই ৮ মাসে পণ্য আমদানি কমেছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৪১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন। আগের অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারী) আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭১৯ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৮ দশমিক দশমিক ৫ মেট্রিক টন।

আরো পড়ুন: রাজধানীতে পরিবহনে নৈরাজ্য, ভাঙাচোরা নিষিদ্ধ লেগুনা চলছে ‘বীরবেশে’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্য পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না। এছাড়া নানা অনিয়ম ও হয়রানির কারণে রাজস্ব আদায় কমে যাচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এসব নানা কারণে গত ১০ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে আরোও জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) বেনাপোল কাস্টমস হাউজে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছিল। গতবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

আরো পড়ুন: টাঙ্গাইলে বাস চাপায় স্বামী নিহত স্ত্রী আহত

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭১৯ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৮ মেট্রিক টন। আমদানি কম হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৯৪১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন। যে কারণে রাজস্ব আদায়ও কম হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আমদানিকারক দাবি করেন, কাস্টমের নানা হয়রানি আর বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। ফলে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

যশোরের আমদানিকারক জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা মোটর পার্টস আমদানি করে তা সারাদেশে বিক্রি করে থাকি। বর্তমানে যশোরের কোনো ব্যাংক এলসি খুলছে না। যে কারণে আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। পণ্য আনতে না পারার কারণে ব্যবসায়িক ভাবে লোকসান হচ্ছে।

আরো পড়ুন: ধামইরহাটে বাড়ীঘর ভাংচুর, লুটপাটসহ দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব শামসুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে আমদানি কম হয়েছে। আর আমদানি কমলে রাজস্বও কম আসবে এটাই স্বাভাবিক।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেওয়ার নিয়ম করেছে। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিক ভাবে দুরাবস্থায় আছেন। এখন আমদানিকারকরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। তিনি বলেন, একে তো বাণিজ্য ভালো নেই, তার ওপর পণ্য আমদানি করতে না পারলে আমদানির সঙ্গে জড়িতরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।

আরো পড়ুন: আজ রাত সাড়ে ১০টায় প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছে না। যে কারণে গত ৮মাসে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আয়ও কমে যায়।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker