ফুটবল

ভিনদেশি পতাকা ওড়ানো হচ্ছে :পতাকা বিধি মানা হচ্ছে কি?

সারাবিশ্ব যেন চার বছর অপেক্ষার পর আনন্দ বিষ্ময়ের আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা। সবাই নিজের পছন্দের ফুটবল দলের জার্সি কিনছেন পতাকা টানিয়ে দিচ্ছেন ছাদে বা বারান্দায় কিম্বা গাছের মগডালে। তবে ভিনদেশি পতাকা ওড়ানোর নিয়ম জানা আছে কি সবার?মানছেন কি ভিনদেশি পতাকা উড়ানোর বিধি?

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় দেখা যায়, মা থেকে মাসির দরদ যেন উথলিয়ে পড়ছে,ভিনদেশি দলের জন্য, প্রতিপক্ষ দলের সাপোর্টারদের নুন্যতম ছাড়টুকু দিতেও রাজি না।শুধু কিশোরগঞ্জ নয় গোটা বাংলাদেশ ব্যাপি পকেটের টাকা খরচ করে, অনেকে আবার জমি বিক্রি করে তৈরি করছেন প্রিয় দলের পতাকা।ভিনদেশের প্রতি প্রেম দেখাতে গিয়ে নিজের দেশের বিধি লঙ্গন করা মোটেও সমীচীন নয়!

দেখা যায়,কেউ কেউ আছেন শুধু ভিনদেশি পতাকা একটি খুটির সঙ্গে বেঁধে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার একই খুটিতে জাতীয় পতাকার সঙ্গে ভিনদেশি পতাকা উড়াচ্ছেন। এই নিয়ম পুরোপুরি ভুল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, ১৯৭২-এর বিধি অনুযায়ী বিদেশী পতাকা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তবে যে কোনো বিদেশী পতাকা উত্তোলন করতে হলে সঙ্গে একটি জাতীয় পতাকাও ওড়াতে হবে। দুটি পৃথক স্তম্ভে উত্তোলন করতে হবে দুটি পতাকা। এক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার নিচে থাকবে ভিনদেশি পতাকাটি। পতাকার সাইজটা একই সমান হতে হবে এবং বাংলাদেশের পতাকা ডানদিকে থাকবে। সূর্যাস্তের আগেই আবার পতাকা নামিয়ে ফেলতে হবে।

এছাড়াও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন। জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নির্দেশ করে। সব সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত ভবনে প্রতি কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে।

জানা যায়,বাংলাদেশ পতাকা রুলস, ১৯৭২-এর ৪ ধারায় কোন কোন দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন-মহানবী হজরত মুহাম্মদের (স.) জন্মদিনে (ঈদে মিলাদুন্নবী), স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও সরকার ঘোষিত অন্য যে কোনো দিবসে বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন এবং কনস্যুলার অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে বা সরকার ঘোষিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান করা হয়েছে।

জাতীয় পতাকা সর্বত্র প্রদর্শন করা যায় না। জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের একটা নিয়ম রয়েছে। ইচ্ছে করলেই যে কেউ গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন না। কেননা আইনে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায়ই গাড়ি কিংবা কোনো যান, রেল কিংবা নৌকার খোলে, উপরিভাগে বা পেছনে পতাকা ওড়ানো যাবে না। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও দফতর, যেমন- রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর ভবন, জাতীয় সংসদ ভবন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময় এবং কিছু নির্ধারিত ভবনসমূহে সব কর্মদিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। এসব ক্ষেত্রে শুধু সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত পর্যন্ত পতাকা উত্তোলিত রাখতে হবে। এটাই নিয়ম।

তবে বিশেষ কারণে রাতে ভবনসমূহে পতাকা উত্তোলিত রাখা যেতে পারে। যেমন- সংসদের রাতের অধিবেশন, রাষ্ট্রপতি বা মন্ত্রীগণের শপথ অনুষ্ঠান চলাকালীন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে, নৌযানে ও বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে। এ ছাড়া স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী সমমর্যাদার ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনস্যুলার পোস্টসমূহে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হয়। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধানের গাড়িতে ও তাদের নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে গাড়িতে ও নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

বাংলাদেশের পতাকার ওপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা ওড়ানো যাবে না। অন্য দেশের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হলে প্রথমে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে। নামানোর সময়ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সর্বশেষে নামাতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে বাংলাদেশে বিদেশি পতাকা ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছিলো । ওই রিট আবেদনে বলা হয়, ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দলের বাংলাদেশি সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি পতাকা উত্তোলন করেন। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২-এর বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলো ছাড়া অন্য কোনো স্থানে অন্য রাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলন করতে হলে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

মূলকথা হলো, বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে পতাকা উড়ানোর যে নিয়ম অনুসরণ করা হয় তাতে প্রথমত, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করা হয়। দ্বিতীয়ত, অনুমোদন ছাড়াই বিদেশি পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে পতাকাবিধিমালাকে লঙ্ঘন করা হয়।

ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়ে যে উন্মাদনা আর উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে তাতে আবেগের একটি প্রভাব থাকবে সমর্থকের মনে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের পতাকা কিংবা আইনের চেয়ে ফুটবলের প্রতি আবেগ কখনোই বড় কিছু নয়। এই পতাকার পেছনে আমাদের সংগ্রাম ও জাতীয় চেতনাকে লালন করে জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষায় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker