জাতীয়

একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ আজ, নতুন সংসদ বসছে কাল

আজ ২৯ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের পাঁচ বছর পূর্তি হচ্ছে। আগামীকাল ৩০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হবে নতুন সংসদের। একাদশ সংসদের কার্যদিবস কম হলেও সর্বোচ্চসংখ্যক ২৫টি অধিবেশন বসেছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংসদে সক্রিয় থাকায় সংসদ বর্জনের সংস্কৃতির অবসান হয়েছে।

রাজপথে সক্রিয় বিএনপির সংসদ সদস্যরা মেয়াদপূর্তির এক বছর আগেই পদত্যাগ করায় এই সংসদের কার্যকারিতার প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয়। এই সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ ও মুলতবি প্রস্তাবও উপেক্ষিত ছিল।

এই সংসদে সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবে তেমন কোনো সংসদীয় বিতর্ক বা আলোচনা হতে দেখা যায়নি। প্রথম অধিবেশনে সংসদীয় কমিটিগুলো গঠিত হলেও বেশির ভাগ কমিটি ছিল নিষ্ক্রিয়।

সংসদের শুরুতে যোগ না দিলেও পরে বিএনপির যোগদানের পর অনেকটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সংসদ। টানা সাড়ে তিন বছর বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে থাকা অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন জাপা ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

এরপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নানা ইস্যুতে জোরালো বক্তব্য দিলেও এই সংসদের কার্যকারিতা ও বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পর্যবেক্ষকমহল।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর অধিবেশন শেষ হয়। সর্বশেষ ২৫তম অধিবেশনের ৯ কার্যদিবসসহ এই সংসদের মোট কার্যদিবস ছিল ২৭২টি। এর আগে দশম সংসদ ৪১০ কার্যদিবস ও নবম সংসদ ৪১৮ কার্যদিবস চলে।

করোনার কারণে মাত্র দেড় ঘণ্টায় একটি অধিবেশন শেষ করা হয়েছে, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম সংসদ অধিবেশন।

এই সংসদের ২৫টি অধিবেশনের মধ্যে দুটি বিশেষ অধিবেশন ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বিশেষ অধিবেশন বসে। পরের বিশেষ অধিবেশনটি ছিল জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গত বছরের এপ্রিল মাসে।

বেসরকারি বিল ও মুলতবি প্রস্তাব উপেক্ষিত 

এই সংসদে নিয়ম মেনে সরকারি বিল পাস হলেও কোনো বেসরকারি বিল পাস হয়নি। এসংক্রান্ত কমিটি নিয়মিত বৈঠকও করেনি। আর সংসদের কাজ স্থগিত রেখে সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য মুলতবি প্রস্তাব আনার বিধান থাকলেও জাতীয় সংসদে কোনো মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি।

জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের আলোচনা স্থগিত

একাদশ সংসদে বেশির ভাগ সময় জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের ওপর আলোচনা স্থগিত রাখা হয়। এ ছাড়া কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী, জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তাব (প্রস্তাব সাধারণ) আনা যায়। এই আলোচনাও খুব বেশি হয়নি। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ জাতিকে জানাতে এই বিধিতে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক। এটি নিয়ে আলোচনা হয়, যা ছিল ব্যতিক্রম।

রেকর্ডসংখ্যক এমপির মৃত্যু

একাদশ সংসদের মেয়াদে ৩১ জন এমপির মৃত্যু ঘটেছে, তাই উপনির্বাচনের বেলায়ও চলতি সংসদে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অতীতের কোনো সংসদের বেলায় এমন ঘটনা ঘটেনি। বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ বরেণ্য সংসদ সদস্যরা মৃত্যুবরণ করেন।

একাদশ সংসদের বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, আগের মতো এই সংসদে বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের ঘটনা ঘটেনি। ওয়াক আউটের ঘটনা ছিল খুবই কম। বিরোধীদলীয় সদস্যরা বাধাহীনভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

একাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, সংসদকে কার্যকর করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। অতীতের মতো সংসদ বর্জনের পরিবর্তে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে সব সময় সোচ্চার ছিলেন।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker