বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব প্রতিটি কাজে নীরবে থেকে বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। পাশাপাশি স্বাধীনতা যুদ্ধেও বঙ্গমাতার অবদান ছিল বলে জানিয়েছেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ২০২১ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা জীবনের ভিক্ষা না চেয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
ওই সময় মায়ের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন কেউ মৃত্যুর সামনে দাঁড়ায় তখন জীবন ভিক্ষা চায়, কিন্তু আমার মা ভিক্ষা চান নাই। তিনি জীবন দিয়ে গেছেন।
আব্বাকে (বঙ্গবন্ধু) হত্যা করেছে যখন দেখলেন, তখন বললেন আমাকেও মেরে ফেলো। ঘাতকের বন্দুক গর্জে উঠেছিল। সেখানেই মাকে হত্যা করে। কতটা সাহস একটা মানুষের থাকে। জীবনের ভিক্ষা না নিয়ে তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
১৫ আগস্ট কেন এই হত্যাকাণ্ড চালানো হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার বাবার, আমার মায়ের, আমার ভাইয়েদের?’মায়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমার মা কখনো সামনে আসেননি। কখনো মিডিয়ার সামনে আসেননি। নীরবে থেকে বাবাকে প্রেরণা দিয়ে গেছেন। তার নীরব সাক্ষী আমি।
‘মায়ের সাথে বয়সের তফাৎ বেশি না। ১৭-১৮ বছর পার্থক্য হবে। মায়ের সবচেয়ে কাছের এবং সুখ-দুঃখের সাথী ছিলাম আমি। তার ধৈর্য-সাহস এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে যথেষ্ট অবদান রেখেছে।’
বঙ্গমাতার সাদাসিধে জীবনের কথাও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘স্বামীর কাছে মানুষের অনেক চাহিদা থাকে। কিন্তু মায়ের কখনো বাবার কাছে চাহিদা ছিল না। বলতেন, সংসারের কথা ভাবতে হবে না। দেশের কথা চিন্তা করো। বাবা কারাগারে গিয়েছেন। মা সেখানেও তাকে প্রেরণা দিয়েছেন।’
বেগম ফজিলাতুন নেছা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের এই দিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৯১ বছর। তার ডাকনাম ছিল রেণু। পিতা শেখ জহুরুল হক ও মাতা হোসনে আরা বেগম।
রেণুর বয়স যখন ৫, তখনই মা-বাবাকে হারান তিনি। তার বাবা শেখ জহুরুল হক ছিলেন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর চাচা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যখন রেণুর বিয়ে হয়, তখন তার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর।
বঙ্গবন্ধু রাজনীতির কারণে জীবনের একটি বড় সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। তিনি কারাগারে থাকার সময় সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবই।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে একাত্তরের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের ঠিক আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু যখন কী বলবেন তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন, তখন তাকে সাহস জুগিয়েছিলেন শেখ ফজিলাতুন নেছাই।
এবারই প্রথম তার জন্মদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন হচ্ছে।
চলতি বছর বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক চালু করে সরকার। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, সমাজসেবা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, কৃষি ও পল্লি উন্নয়নে অবদানে পাঁচ বাংলাদেশি নারীকে দেয়া হয় এই পদক। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।