দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের মিত্র দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতা করতে চায়। এতে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাপা। দলটি কমবেশি ৪০ আসনে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে।
দুই দলের এমন অনড় অবস্থার মধ্যে গতকাল শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছে।
বৈঠক শেষে জাপার একজন কো-চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অনেক ফারাক, তাই বৈঠকে আসন নিয়ে সমঝোতা হয়নি।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম উপস্থিত ছিলেন। জাপার পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন দলের কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বৈঠকে ছিলেন না।
দুই দলের মধ্যে যে কয় আসনে সমঝোতা হবে, ওই সব আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের দল মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে সরিয়ে নেবে। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জাপার একটি সূত্র বলছে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনে থাকার অনুরোধ জানায় আওয়ামী লীগ।
গত ৬ ডিসেম্বর গুলশানে জাপার নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। এরপর ৯ ও ১২ ডিসেম্বর আবার গুলশানে বৈঠক হয় দুই দলের নেতাদের।
দুই দলের একাধিক সূত্র জানায়, প্রথম বৈঠকে জাপা কমবেশি ৭০ আসনের একটি তালিকা দিয়েছিল। সে অবস্থা থেকে সরে এসে এখন কমবেশি ৪০ আসন নিয়ে সমঝোতা করতে চায় জাপা।
গতকালের বৈঠক সূত্র জানায়, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, রুস্তম আলী ফরাজীসহ কয়েকজন সংসদ সদস্যকে এবার জাপার মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আনেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গুরুত্বপূর্ণ এসব নেতাকে গতবার ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এবার তাঁরা নেই। ফলে আওয়ামী লীগ অনেক হিসাব কষে ২৬ আসনে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়।
বৈঠকের পর জাপা মহাসচিবের মোহাম্মদপুরের বাসভবনে যান দলের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাঁরা আসন সমঝোতার বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নুর কাছ থেকে অবহিত হন। ওই বৈঠক থেকে বের হয়ে একজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে সম্মত হননি জাপার দুই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। ফলে আলোচনা অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবে। জাপা নেতারা তাঁদের প্রস্তাব নিয়ে আজ আবার বৈঠকে বসবেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে জাপার সঙ্গে সমঝোতা হয় ৩৭টি আসনে। তবে সাতটি আসন উন্মুক্ত রাখা হয়। নির্বাচনে জাপা ২২ আসনে জয়ী হয়। পরে উপনির্বাচনে আরো একটি আসনে বিজয়ী হলে জাপার সংসদ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩।
সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য, ২৩ আসনের বেশির ভাগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা নেই। সাম্প্রতিক আলোচনাগুলোতে জাতীয় পার্টির সামনে বিষয়টি তোলা হয়েছে। আসন ধরে ধরে আলোচনায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া জাপা প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনা একেবারেই কম। এসব আসনে জাপা প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনার দায়িত্ব নিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.