জাতীয়

উপজেলা নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে: টিআইবি

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। সংস্থাটি জানায়, দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী ১১৬ জন। প্রতি চারজন প্রার্থীর একজন ঋণগ্রস্ত প্রার্থী রয়েছে। এছাড়া মোট প্রার্থীর মধ্যে ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রার্থী বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত।

উপজেলা পরিষদে গতবার  নির্বাচিতদের আয় ও সম্পদ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাদের নিজেদেরই নয়, স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।

আজ রবিবার (১৯ মে) রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে টিআইবি। 

এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংসদের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একদলীয় প্রভাব রয়েছে।

অধিকাংশ প্রার্থী এক দলের। এটাকে সুস্থ গণতন্ত্র বলা যায় না। এটি রাজনৈতিক আদর্শের কোন প্রতিযোগিতা নয়, এটা ক্ষমতার দ্বন্দ্বের প্রতিযোগিতা।’

তিনি আরো জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায়ও কম।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নারী প্রার্থী আছেন মাত্র ২৪ জন। জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ শতাংশ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্বিতীয় ধাপেও লড়ছেন বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীরা। যদিও দলের নির্দেশ না মেনে বহিষ্কৃত হয়েছেন ৬৪ জন প্রার্থী।

উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে রাজনৈতিক লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দলগত অবস্থান প্রায় শূন্য। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের অংশগ্রহণের হার প্রথম ধাপের তুলনায় বেড়েছে। দ্বিতীয় ধাপের লড়াইয়ে চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন রয়েছেন ১৭ জন। আর অতীতের ক্ষমতায় থাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্রুত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট লক্ষ্য করা গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

টিআইবি জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট প্রার্থী এক হাজার ৮১১ জন। এর মধ্যে ৪৬২ জন প্রার্থী ঋণগ্রস্ত। চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ২৩৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৬৭ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান ৬০ জন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থনপুষ্ট।

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি জানায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে পাঁচ বছরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর আয় বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায়, অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ১১ হাজার। স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ১২ হাজার চার শ শতাংশ। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০.৫১ শতাংশই ব্যবসায়ী। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৮.৭৩ শতাংশ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৯.২৬ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। 

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫১.৬৩ শতাংশই নিজেকে গৃহিণী ও গৃহস্থালির কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। ওই প্রার্থীদের সাড়ে ১৪.৫৫ শতাংশের আয় আসে ব্যবসা ও কৃষি থেকে। আয় নেই ১০.৯২ শতাংশের। ৪৭ শতাংশ নিজেদের আয়ের কোনো স্বীকৃত উৎস দেখাননি। সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪২ শতাংশই আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থী।

টিআইবি আরো জানায়, চেয়ারম্যান ও অন্যান্য প্রার্থীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য আয় বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২১ শতাংশ প্রার্থীদের আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, যেখানে অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা ৫৩ শতাংশ। একইভাবে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২৩.৬২ শতাংশ এর আয় সাড়ে ১৬ লাখ টাকার ওপরে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদে অপেক্ষাকৃত ধনীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় ১৯৪ শতাংশ প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকার নিচে, বাকি প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকা বা তার বেশি। প্রায় ৩ গুণ হয়েছে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা। প্রায় ২৫ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ বা দায় রয়েছে। গত ৫ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৯০০ শতাংশ, ১০ বছরে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৩৬ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ। আইনি সীমা বা ১০০ বিঘা বা ৩৩ একরের বেশি জমি আছে ৪ জন প্রার্থীর।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ ২১ মে। এই ধাপে দেশের ১৫৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। এরপর তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৫ জুন।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker