সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ সদস্য নিহত
সিলেটের গোলাপগঞ্জে ভয়াবহ টিলা ধস নিহত ৪ জন। শনিবার রাতে বৈরি আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় টিলা ধসে মাটিচাপায় একই পরিবারের চার সদস্য নিহত হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার ৭ নম্বর লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের বখক্তিয়ার ঘাট এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। বৈরি আবহাওয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বে লাশ উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়। পরে রবিবার (১ জুন) সকাল ৭টার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতের টানা ভারী বৃষ্টিপাতের পর টিলার পাদদেশে অবস্থিত একটি কাঁচা বাড়ির ওপর হঠাৎ করে মাটি ধসে পড়ে। ঘুমের মধ্যেই পুরো পরিবার মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। স্থানীয় জনগণ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মাটি সরিয়ে একই পরিবারের চার সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তবে তাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া হয়নি।
নিহতদের তালিকা:
- রিয়াজ উদ্দিন
- রিয়াজের স্ত্রী
- রিয়াজের এক ছেলে
- রিয়াজের এক মেয়ে
টিলা ধসে নিহত একই পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিনের নাম জানা গেছে। বাকিরা হলেন তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান খলকুর রহমান বলেন, ‘রাত দুইটার দিকে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয়রা সবাই ছুটে আসেন। কিন্তু লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে খবর দেই। কিন্তু বৈরি পরিবেশের জন্য সকাল ছয়টার আগে ফায়ার সার্ভিস এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি।’ তিনি আরও জানান, ‘আমি এলাকাবাসীকে নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিলাম। কিন্তু যখন দ্বিতীয় দফায় টিলা ভেঙে মানুষগুলোকে মাটির নিচে নিয়ে যায় তখন আমি তাদের সরিয়ে নিয়ে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী আরেকজনের বাড়ির উপরেও আরেকটা টিলা নামছে। আমি মানুষ, গবাদি পশু উদ্ধার করেছি। এরপর থেকে আমরা ফায়ার সার্ভিসের অপেক্ষায় ছিলাম।’ তার এই বক্তব্যে বৈরি পরিবেশে উদ্ধার অভিযানের কঠিন চিত্র ফুটে উঠেছে।
বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে টিলা ধসের ঘটনা নতুন নয়। অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন এবং অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কারণে প্রতি বছরই এমন দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রশাসনকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বসবাসকারীদের সতর্ক করতে এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।