লালমনিরহাট

তিস্তায় পানি হৃাস বৃদ্ধিতে বাড়ছে দুর্ভোগ, ত্রাণ পাচ্ছে না পানিবন্দি পরিবার গুলো

তিস্তা নদীর পানি কখনো বিপদসীমার উপরে আবার কখনো পানি বিপদসীমার নিচে। ফলে সকালে পানি বসত বাড়ি থেকে নেমে গেলেও বিকালে আবারও পানিবন্দি হচ্ছে তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার পরিবার। সব মিলে তিস্তা পাড়ে এখন চলছে পানি আতংক। এদিকে লালমনিরহাটে তিস্তায় চলছে সতর্ক সংকেত। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।

জেলার পানিবন্দি ৩০ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগন্য। ফলে ত্রাণ নিয়ে তিস্তা পাড়ে লোকজনের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছি।

বুধবার (২২ জুন) বিকেল ৩টায় তিস্তার পানি তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে ৫২.৪২ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়। যা বিপদসীমার১৮ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। (স্বাভাবিক ৫২.৬০ সেন্টমিটার)।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে ২৮ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতে তা বেড়ে ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বুধবার সকালে আসতে আসতে কমতে থাকে এবং সকাল ৯ টায় পানি নেমে গিয়ে বিপদসীমার ১০ সে মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেলে আর একটু কমে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার সারাদিনে তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর তীরবর্তী প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরে। পানি কমা বাড়া করায় ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে তীরবর্তী পরিবার গুলো। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের সবকটি গেট খুলে দিয়েছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।

পানিবন্দি পরিবার গুলোর অভিযোগ, তারা দুই এক দিন পর পর পানি বন্দি হচ্ছে। এর ফলে পানিবন্দি মানুষগুলো খাবার এবং সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেভাবে ত্রাণ পাচ্ছে না। ১০ কেজি করে চাল দেয়া হলেও তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ত্রাণের ১০ কেজি চাল দিয়ে তাদের কিছুই হচ্ছে না। তারা আরো ত্রাণ বিতরণের দাবী তুলেছেন।

উপজেলার চরসিন্দুর্না গ্রামের জরিনা খাতুন(৪০) জানান,তিস্তার পানি এসে ঘরবাড়ির সবকিছু ভেসে গেছে। কিছু মালামাল আটক করে নৌকায় করে এপারে নিয়ে এসেছি। মুরগি ছাগল সবকিছুই ভেসে গেছে। জায়গা জমি নাই। স্থানীয় হাটখোলায় বাজারে মানুষের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচার চরের বাসিন্দা আব্দুল কাউয়ুম বলেন, কয়েকদিন থেকে পানিবন্দী অবস্থায় আছি। গতকাল থেকে আবারও পানি বেড়ে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। গরু ছাগল নিয়ে খুব মুশকিলে পড়ছি।

বন্যার্তদের খোজ নিতে গতকাল রাতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর লালমনিরহাট সদর এবং আদিতমারী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি এসময় সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বাদল, রাজপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোোফা ও মোগলহাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, তাদের ইউনিয়নে যে পরিমান পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই তুলনায় তারা ত্রাণ দিতে পারছে না। প্রতিদিন ত্রাণের জন্য লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে ভীর করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে পানি কমে বিপদসীমা ছুইছুই হলেও বিকালে বেড়ে ২৪ সেন্টিমিটার ও রাতে ৩১ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে গত ১২ জুন থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বৃদ্ধি ও কমার মধ্য দিয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ১৭ জুন শুক্রবার সকাল ৬ টায় প্রথমবারের মতো বিপদসীমা অতিক্রম করে ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বুধবার সকাল ৯ টায় আবারও পানি নেমে গিয়ে বিপদসীমার ১০ সেঃ মিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, ত্রাণের কোনো সংকট নেই। চারটি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের বেশ কিছু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় আমরা ১৫০ মেঃটন চাল ও ১২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত মুজুত রয়েছে এরপরেও যদি আরও প্রয়োজন হয় আমরা কথা বলেছি ব্যবস্থা করতে পারবো।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker