নওগাঁ

নদীর স্নিগ্ধজলে, পাখির কুহুতানে মুখর ‘কুঞ্জবন

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরে কুঞ্জবন গ্রাম। এ গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। এ নদীর দুপারের সড়ক আর সড়কের পাশে অসংখ্য গাছ। বয়ে যাওয়া নদীর স্বচ্ছ পানিতে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে চারপাশ।

শীতের শুরু থেকেই অসংখ্য পরিযায়ী পাখি এসে আবাস গড়েছে আত্রাই নদীর তীরের পুরো কুঞ্জবন এলাকাজুড়ে। পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দে এখন ঘুম ভাঙে নদীর দু’পারের বসবাসকারী মানুষদের। নিরাপদে পাখিগুলোর বসবাসের জন্য আবাস করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর ধরে নওগাঁর মহাদেবপুরের আত্রাই নদীর কুঞ্জবন এলাকাজুড়ে অতিথি পাখি আসছে শীত মৌসুমে। শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পরিযায়ী পাখিরা এসে কুঞ্জবনের নদীতে আশ্রয় নেয়। শীতের শুরুতে আসতে থাকে পাখি। নদীতে বছরের ৪ থেকে ৫ মাস পাখিগুলো থাকে। সারা দিন নদীতে থাকলেও রাতে পাখিগুলো ফিরে যায় পাশের রামচন্দ্রপুর, মধুবনসহ কয়েকটি স্থানের গাছে। ভোরে আবারও ফিরে আসে আত্রাই নদীতে। প্রতিদিনই পরিযায়ী এসব পাখি দেখতে আসে দূর-দূরান্ত থেকে নানা বয়সী দর্শনার্থীরা।

পাখি দেখতে নওগাঁ শহরের তাজের মোড় থেকে এসেছেন সারোয়ার হোসেন দম্পতী। কথা হলে সারোয়ার বলেন, আত্রাই নদীতে পাখির কলরবে পুরো কুঞ্জবন এলাকা যেন মুখরিত হয়ে গেছে। এখানে এসে আমাদের খুব ভালো লাগছে। পাখিগুলোতে কেউ যেন বিরক্ত না করে সেদিকে প্রশাসনের খেয়াল রাখতে হবে।

Image

নওগাঁ শহরের চকদেব পাড়া থেকে এসেছেন সজিব হোসেন, এসময় সজিব বলেন, প্রতিবছর এখানে অনেক পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে বলে জানতে পেরে এসেছি। এতগুলো পাখি একসাথে কখনো দেখিনি। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে। তবে নদীতে ড্রেসার মেশিন নামিয়ে বা কেউ যাতে পাখিগুলোতে শিকার না করে দেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে কৃর্তপক্ষের।

মহাদেবপুর উপজেলা সদরের সুমন হোসেন বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী মিলে পাখিগুলো দেখতে এসেছে। শীত মৌসুম ছাড়া এখানে এত পাখির বিচরণ হয়না। স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি যদি সরকারিভাবে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে আগামীতে এই এলাকায় পাখিদের আরও বেশি আগমন ঘটবে এবং সেই সাথে এটাকে ঘিরে বিনোদনের কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে বলে মনে করছি।

কথা হয় স্থানীয় বিচিত্র পাখি উৎপাদন গবেষণা পরিষদ নামের সামাজিক সংগঠনের পরিচালক মুনসুর সরকার এর সাথে। তিনি বলেন, পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ দিয়ে ঘের তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। কেউ গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ গা পরিষ্কার করছে। আবার কেউ বাঁশের ওপর বসে আরাম করছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি শীত মৌসুমে বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরাসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ ঘটেছে আত্রাই নদীতে। এছাড়া পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজাহাঁস, বালিহাঁস, পাতিকুট, শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁসসহ প্রায় ১২ জাতের দেশি পাখির সমাগম ঘটেছে।

কেউ পাখি শিকার বা মাছ শিকার করতে গিয়ে পাখিদের বিরক্ত না করে সে জন্য আমরা কাজ করছি। মাঝে মাঝেই আমরা মাইকিং করে জনসাধরণকে সতর্ক করছি। সরকারি উদ্যোগ নিয়ে এখানে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে।

মহাদেবপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, আত্রাই নদীতে যেসব স্থানে পাখিদের অবাধ বিচরণ আছে। সেই সব স্থানে যাতে কেউ নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের অবাধ বিচরণে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে নজরদারি রয়েছে। এছাড়া কেউ যদি পাখি শিকার করে, আমরা জানতে পারলে বনবিভাগের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন গুলোও পাখির অবাধ বিচরণে কাজ করে যাচ্ছে।

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker