নওগাঁ

আত্রাইয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইনের পাশে বসবাস

নওগাঁর আত্রাইয়ে (আহসানগঞ্জ) রেল লাইনের দুই পাশে গডে ওঠা বসবাসকারী বস্তিবাসীদের পূর্নবাসনের বিষয়ে স্থায়ী কোনো সমাধান কখনোই হয়নি। যদিও কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি সেই উদ্যোগ। ফলে রেল লাইনের পাশে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন বস্তিবাসি।

কয়েক বছর আগে রেলকর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ করা হলেও আবার গড়ে উঠেছে নতুন বস্তি। আর্থিক বাণিজ্যের কারণে মুলত স্থানীয় ভাবে বস্তি উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তারা বলেছেন, এই ভাবে বসবাস খুবই বিপদ জনক। রাষ্ট্রের উচিৎ, এই মানুষগুলোকে আবাসনের ব্যবস্থা করে দ্রুত অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া। গত দশ বছরে এই সংখ্যা কত বেড়েছে সেই পরিসংখ্যা এখনও পাওয়া যায় নাই।

উপজেলা পরিসংখ্যা অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৯৯১ সালে বস্তি ছিল তিনটি তা এখন বেড়ে দাড়িয়েছে ২৬-টিতে। বছরের পর বছর নিম্ন আয়ের মানুষ অস্বাস্থকর, ঝুকি পূর্ণ ও নাগরিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত অবস্থায় বৃষ্টিতে বসবাস করছেন, তারা এখন উপজেলা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছেন।

আত্রাই (আহসানগঞ্জ) স্টেশনের উত্তর ভরতেঁতুলিয়া, পুরাতন স্টেশন হয়ে রেল ব্রীজ পার দক্ষিন পার বিহারীপুর শেষ সিমানা পর্যন্ত রেল-লাইনের দুই পাশে গড়ে উঠা বস্তিতে অন্তত কয়েক শত পরিবার বসবাস করে। এই বস্তিতে বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের সু ব্যবস্থা নেই।

জানা গেছে, রেলওয়ের জমিতে ছাপড়াঘর তুলে ভাড়া দেয় এলাকার প্রভাবশালীরা। এভাবে যেখানে সেখানে গড়ে ওঠে অপরিকল্পিত বস্তি। বিদ্যুৎ, পানি, পয়ঃ নিস্কাশন, শিক্ষা আর নিরাপত্তাসহ সকল সুবিধা বঞ্চিত এই ঘিঞ্জি পরিবেশেই কোন মতে দিন পার করেন বাসিন্দারা।

আত্রাইয়ের বিহরীপুর মোস্তাফা মিয়া জানান, ৮ বর্গফুট জায়গার উপর ৩৫হাজার টাকা খরচ করে নিজেই ছাপড়াঘর তুলেছেন। পার্শের কয়েকটি ঘর দেখিয়ে বলেন, ৮ বর্গফুটের একটি ঘরের ভাড়া তিন থেকে চার হাজার টাকা। তার স্ত্রী জ্যোস্না বেগম বলেন, পেটের দায়ে থাকি। এখানে স্বামী ভ্যানে সবজি বিক্রি করে, আমি মেসে রান্নার কাজ করি। এটা দিয়ে সংসার চালাই।

আত্রাই রেললাইনের দু-পার্শের এই বস্তিতে দুই হাজারেরও অধিক মানুষের বসবাস। পানির কল, গোসলখানা নেই। পুরো বস্তির জন্য কোন সরকারি টয়লেট নেই। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা বলছে, প্রতিবছর দারিদ্রের সংখ্যার বাড়ছে এরা বিভিন্ন নদী ভাঙ্গা, চর এলাকা থেকে কাজ করতে আসে। এদের মধ্যে প্রায় সকলেই নিম্ন আয়ের। যারা প্রধানত বস্তিতে বাস করে। “যারা বস্তিতে আছেন, তারাও এই দেশের নাগরিক। তাদের সহায় সম্বল নেই। তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার পক্ষে নই। আবার তারা যে জমিতে থাকে সেটা রেলওয়ের সম্পতিতে। এভাবে বসবাস করা বৈধ নয়, কিন্তু এরা কীইবা করবে? এর সমাধান করতে হবে সরকারকেই।

স্থপতি ইকবাল হাসান বলেন, বস্তিবাসীদের সমস্যা সমাধানে কার্যত সরকারের কোনো উদ্যোগনেই, এটা দুঃখজনক।

আহসানগঞ্জ পুরাতন স্টেশন সহকারী স্টেশন মাস্টার মো: অহিদুর রহমান বলেন, রেল লাইনের ধারে গড়ে ওঠা বস্তিগুলো সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে রেলওয়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ সরকার দলীয় কিছু নেতা এবং রেলওয়ের অসাধু কমকর্তারা। এ বিষয়ে আমি আমার উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষকে বার বার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নাই। তাই এই বস্তি উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা অদুর ভবিষৎতে আছে বলে মনে হয় না।

Author

দ্বারা
কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ প্রিতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker