আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের আবর্তে গ্রাম বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর এখন বিলুপ্তির পথে। গরীবের এসিখ্যাত মাটির বাড়ি এখন আর নেই বললেই চলে।
জামালপুর (সদর-৫) উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই মাটির কিছুসংখ্যক ঘর রণরামপুর, পলাশতলা, শ্রীপুর, গোবিন্দপুর, বাশচড়া ও ভালুকা এলাকাতে রয়েছে। গ্রামের মাটির ঘর ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইটের ঘর নির্মাণ করছেন অনেকেই। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামবাংলায় মাটির ঘরের প্রচলন ছিল।
এঁটেল মাটি দিয়ে এসব ঘর তৈরি করা হতো। মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাঁদায় পরিনত করে সেই কাদা ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হতো। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে, কারণ একসঙ্গে বেশি উঁচু করে তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। একটি মাটির ঘর তৈরি করতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগে।
কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার ওপর একই উচ্চতায় দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দেয়াল ১০-১২ ফুট উঁচু হলে বেশ কিছুদিন ধরে রোদে শুকানো হয়। তারপর এই দেয়ালের ওপর বাঁশের চালা তৈরি করে খর বা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হয়। একটি মাটির ঘর তৈরি করতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগে।
মাটির ঘর শীত গরম উভয় মৌসুমে বেশ আরামদায়ক তবে বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকসই হয়।
গৃহিনীরা তাদের নরম হাতের কোমল ছোঁয়ায় নিপুন ভাবে কাদা দিয়ে লেপে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করত। এখন আর সেই মাটির ঘর চোখে পড়ে না বললেই চলে।
উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের রণরামপুর গ্রামে মাটির ঘরের মালিক মৃত ময়নাল হকের স্ত্রী ছামিরন বেওয়া (৬০) জানান, আমাদের এই গ্রামে এক সময় অনেক মাটির ঘর ছিলো। এখন আর সেই ঘর গুলো নেই। তিনি আগে ছোনের ঘরে বসবাস করতেন। এখন ৩০বছর যাবত মাটির ঘরে বসবাস করছেন। সবাই টিন ও ইটের ঘর তৈরি করেছেন। আমার সামর্থ্য নেই এই ঘর ভেঙে নতুন একটা পাকা ঘর দিবো। এই ঘরে থাকতে অনেক সমস্যা হয়। বৃষ্টি এলেই ভেঙে পড়ে, পোকা মাকড়ের ও সাপের ভয় থাকে। সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া। আমাদের যেন একটা সরকারী পাকা ঘর দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শরিফপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আলম বলেন, বর্তমানে সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছেন। যাদের জায়গা আছে ঘর নেই এমন ব্যক্তিরদের জন্য কোন ঘরে চাহিদা এখনও আসেনি। তবে যখন চাহিদা আসবে তখন তার নাম তালিকায় দেওয়া হবে।