করোনার সময় সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কওমি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা খোলা ছিল। দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় টাঙ্গাইলের সখীপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। এক মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও প্রাথমিকের ১ হাজার ৭০৯ জন শিক্ষার্থী এখনো ক্লাসে ফেরেনি।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ক্লাসে না ফেরা শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়েনি, তবে তারা কওমি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। শিক্ষকেরা বলছেন, আগামী জানুয়ারিতে আরও এক হাজার শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসা থেকে বিদ্যালয়ে ফেরানো সম্ভব হবে। গত ১২ সেপ্টেম্বর খোলার পর গতকাল সোমবার পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপস্থিত-অনুপস্থিতের সংখ্যা ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজার ৫৯৪। বিদ্যালয় খোলার পর এক মাস ধরে অন্তত এক দিন হলেও ক্লাসে উপস্থিত হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৮৫। এক দিনও ক্লাসে আসেনি, এ রকম শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭০৯। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, তারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছে।
উপজেলার কালমেঘা রাঙামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম নব্বেস আলী বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে ২৪৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনার সময়ে ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী কওমি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল। বিদ্যালয় খোলার পর ১৫-১৬ জন বাদে সবাই আবার ক্লাসে ফিরেছে। আগামী জানুয়ারি মাসে বিনা মূল্যে নতুন পোশাক ও উপবৃত্তি পাওয়ায় আরও ১০ জনকে ক্লাসে ফেরানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি।
উপজেলার চাম্বলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিরিন সুলতানা বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে মোট ৮২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এখনো ৫-৬ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে না। সহকারী শিক্ষকেরা ওই সব শিক্ষার্থীর বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন, তারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে।
উপজেলার আড়াইপাড়া বাজারে অবস্থিত ডাকাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, করোনার সময় তাঁর বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একজন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সেই মেয়েটিই কেবল ঝরে পড়েছে। অনেকেই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে তারাও ক্লাসে ফিরে এসেছে। আরও ৩-৪ জন নতুন বছরে ক্লাসে ফিরবে বলে অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন।
উপজেলার কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি আবদুল লতিফ বলেন, উপজেলায় ৬০টি কওমি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল ১৫। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার পর উপজেলায় রাতারাতি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘করোনার সময় কওমি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা খোলা থাকায় সাময়িকভাবে পড়াশোনা চালানোর লক্ষ্যে প্রাথমিকের অনেক শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও, এখন অনেকেই বিদ্যালয়ে ফিরছে। গত এক মাসে ১ হাজার ৭০৯ জন শিক্ষার্থী এক দিনও ক্লাস করেনি। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাকে জানিয়েছেন, তারা ঝরে পড়েনি। তারা মাদ্রাসায় পড়ছে। যারা এখনো মাদ্রাসায় রয়েছে, তারা নতুন বছরের শুরুতে আবার বিদ্যালয়ে ফিরবে বলে আশা করা