বহুল আলোচিত দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা “পুষ্পা: দ্য রাইজ” দেখার পর থেকেই রক্ত চন্দন কাঠের গল্প মাথায় ঘুরছে কম-বেশি সবারই। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত এই কাঠের চাহিদা এতোটাই যে, ভারতে এর চোরাচালান বন্ধ করা নিয়ে চিন্তায় আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ৪০-৪৫ বছর ধরে টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যানে এমন একটি গাছ থাকলেও সম্প্রতি এর পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। খবর পাওয়ার পর প্রতিদিনই গাছটিকে দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
মধুপুর দোখলা বন বিশ্রামাগারের পাশে রয়েছে এই রক্ত চন্দন গাছ।
স্থানীয়রা বলছেন, গাছটির ফুল ও ফল হয় না। তাই এর বংশবিস্তারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন। আর কলম অথবা বৈজ্ঞানিক উপায়ে এর বংশবিস্তারের জন্য ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মধুপুরের অরণখোলা মৌজায় সংরক্ষিত বনভূমিতে ১৯৬২ সালে নির্মিত হয় বন বিশ্রামাগার। এর সামনেই রক্ত চন্দন গাছটি রয়েছে। কিছুদিন ধরে সপ্তাহের বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত গাছটি দেখতে ভিড় করছেন অনেকে। বিশেষ করে ভারতীয় ছবি “পুষ্পা: দ্য রাইজ”-এ গাছটি দেখানোর পর থেকেই এই ভিড়ের শুরু।
উদ্ভিদ বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, এই গাছটির আরেক নাম রঞ্জনা এবং ইংরেজি নাম রেড স্যান্ডালউড। বৈজ্ঞানিক নাম: Adenanthera pavonina; এই ভেজষ উদ্ভিদ লাল চন্দন নামেও পরিচিত। এ গাছের বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে, বাতের ব্যথায় ও প্রদাহ রোধে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, যারাই উদ্যানে আসছেন তারাই রক্ত চন্দন গাছটি এক নজর দেখে যাচ্ছেন। গাছটিতে খোঁচা দিলেই লাল রংয়ের কষ ঝরতে থাকে, যা দেখতে রক্তের মতো। বিষয়টি কৌতূহল বাড়িয়েছে দর্শনার্থীদের।
মধুপুরের দোখলা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “গাছটি আগে থেকেই দেখেছি। কিন্তু জানা ছিল না এটি রক্ত চন্দন গাছ। সম্প্রতি গাছটি শনাক্ত করতে পেরেছি। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের রেস্ট হাউসের ঠিক সামনে গাছটির অবস্থান। বয়স আনুমানিক ৪০-৪৫ বছর হবে। এটি এখন পরিপক্ক অবস্থায় রয়েছে। গাছে আঘাত করলেই রক্তের মতো লাল কষ বের হয়। অনেক মানুষ গাছটি দেখতে আসছে। গাছটি ঘিরে মানুষের কৌতূহল তৈরি হওয়ায় সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। যাতে কেউ এর ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য পাহারা বসিয়েছি আমরা।”
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এটি দুর্লভ ও দামি গাছ। এই গাছটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা সবাই চেষ্টা করছি। এই গাছের বংশবৃদ্ধির জন্য আমরা বীজ থেকে চারা উৎপাদনের চেষ্টা করছি।”