কিশোরগঞ্জ

বিলুপ্ত এই উপকারী প্রাণী শকুন

মাহফুজ রাজা,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের আকাশে, বন বাদাড়ে আর দেখা মিলেনা শকুনের।খালে-বিলে,নালায় মৃত কোন পশু ফেলা মাত্রই  অদৃশ্যভাবে মূহুর্তেই খবর পেয়ে যেতো শকুনের  দল।

Image

শুক্রবার (৫জুলাই)উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে অসংখ্য মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় শকুন এখন গল্প মাত্র। 

স্থানীয় ভাবে একটা কথা প্রচলন আছে,যে দেশে বিচার নাই, সে দেশে শকুন থাকেনা।বিষয়টা আসলে কী তাই? নাকী অন্য অজানা কারনে বিলুপ্ত শকুন।মৃতপ্রাণীর দেহ থেকে রোগ-জীবাণু ছড়ানো ঠেকাতে শকুনের বিকল্প নেই। এই উপকারী পাখিটি মৃতপ্রাণীর মাংস খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে। সারাবিশ্বে রয়েছে মোট ১৮ প্রজাতির শকুন। পাখি প্রেমী মাহফুজ রাজা জানান,

শকুনের বাসার আকার বেশ বড়। একই বাসা ঠিকঠাক করে বছরের পর বছর ব্যবহার করে। স্ত্রী শকুন সাদা রঙের একটি মাত্র ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ৪০-৪৫ দিনে। শকুন তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী। সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃতপ্রায় প্রাণীর চারিদিকে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটির মরার জন্য অপেক্ষা করে। শকুনের গলা, ঘাড় ও মাথায় কোনো পালক থাকে না। প্রশস্ত ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ে। লোকচক্ষুর আড়ালে বট গাছ, ডুমুর গাছ প্রভৃতি বিশালাকার গাছে সাধারণত শকুন বাসা বাঁধে।  জানতে পারি,দক্ষিণ এশিয়া থেকে শকুন প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছিল ১৯৯০ এর দশকে হঠাৎ করে কেন এই শকুনের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাচ্ছিল, সেটা কেউ বুঝতে পারছিল না।

Image

মুনির ভিরানি  এক তরুণ রিসার্চ বায়োলজিস্ট,পেরিগ্রিন ফান্ড  প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট। । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিকারি পাখি সংরক্ষণ প্রকল্প চালায় এই প্রতিষ্ঠান।তিনি বলছিলেন, “তখন এই শকুনের সংখ্যা যে হারে কমছিল, তা আসলেই ভয়াবহ। পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে গেল যে, লোকজন যেন হঠাৎ চারিদিকে তাকিয়ে টের পেল, আকাশ একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে, কোথাও আর শকুন নেই। আরও জানতে পারি- বাংলাদেশে রয়েছে ছয় প্রজাতির শকুন। তবে এর মধ্যে ‘বাংলা শকুন’কেই অন্যতম মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

শুধু জেলার হোসেনপুর উপজেলা নয়, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও শকুন আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শনিবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় এ শকুন দিবসটি।

উপজেলার  এখন অতি বিপন্ন একটি প্রাণীর নাম শকুন। সরাদেশে এখন সব মিলিয়ে তিনশটির কম শকুন রয়েছে। অথচ এক সময়ে প্রায় সর্বত্রই দেখা মিলত বৃহদাকার এই পাখিটির। এখন শুধুমাত্র মৌলভিবাজার, হবিগঞ্জের কালেঙ্গা বনে এবং সুন্দরবন এলাকায় কিছুটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় শকুনের দেখা মেলে। এসব এলাকাকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকাও ঘোষণা করেছে সরকার।

তবে ইদানীং বিভিন্ন দেশে, গবাদিপশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘ডাইক্লোফেনাক’ নামের ব্যথানাশক ওষুধের প্রভাবে শকুন মারা যাচ্ছে। এ কারণে ডাইক্লোফেনাক ওষুধটি ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে অনেক আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শকুনের বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে গবাদিপশুর জন্য ব্যবহৃত ডাইক্লোফেনাক ও কেটোপ্রোফেনের ব্যবহার।

 এ দুই ওষুধের প্রভাব মৃত গবাদিপশুর দেহেও থাকে। ফলে মৃত গবাদিপশুর মাংস খেয়ে মারা যাচ্ছে মহাবিপন্ন এই পাখিটি। পরিবেশবাদী ও পাখি বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক উদ্বেগ ও প্রচারণার পর ২০১০ সালে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশে। তবে এখনো দেশে ডাইক্লোফেনাক বিক্রি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির মুখে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 বিশেষজ্ঞদের মতে, ডাইক্লোফেন দেওয়া হয়েছে, এমন মৃত পশুর মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে। এ কারণে গত তিন দশকে (২০১০) উপমহাদেশে ৭৫ শতাংশ শকুন মারা গেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব ভেটেরিনারি মেডিসিন-এর গবেষক ড. লিন্ডসে ওক তার এক গবেষণায় প্রমাণ করেন, পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনেনাক ব্যবহারই শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। 

হোসেনপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো.উজ্জ্বল হোসাইন  বলেন,শকুন উপকারী প্রাণী। মৃত পশু-পাখি শকুনের খাবার। পরিবেশের জন্য উপকারী। খাবার ও বাসস্থান সংকটের কারনে শকুন বিলুপ্তির পথে।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker