হাওর মানেই চোঁখ ধাঁধানো রুপের রাণী। হাওর বৈচিত্রময় ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে অনন্য এক স্বতন্ত্র সত্তা। কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল যেন কল্পনার তুলিতে আকাঁ ছবির এলবাম।
হাওরের এই সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে নান্দনিক অলওয়েদার সড়ক। হাওরের বিশাল জলরাশির বুক চিরে চলে গেছে ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি।সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে বর্ষার পানিতে দু-পাশে জলের বুকে তরঙ্গের নৃত্য এক কোমল অনুভূতি।
শুকনো মৌসুমে দিগন্ত বিস্তৃর্ত মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ আর অতিথি পাখির মেলা। বর্ষায় চারদিক থৈ থৈ করা পানি। যেন সৌদর্যের বিপুল পসরা সাজিয়ে বসে আছে হাওরের প্রকৃতি। হাওরের পর্যটন খাতের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা।
গভীর হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য তৈরি করা নান্দনিক এই সড়ক এখন সৌন্দর্য পিপাসুদের কাছে হয়ে উঠেছে দুর্নিবার আকর্ষণ। এর ফলে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় উন্মোচিত হয়েছে পর্যটন সম্ভাবনার নতুন আকাশ।
এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক মাছের বিশাল ভান্ডার। শীত-বর্ষার হাওরের স্বতন্ত্র রূপ প্রকৃতি প্রেমীদের দুর্নিবার আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায় হাওরের মাঠে-ঘাটে-বাঁকে। হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে প্রতিদিন ভীড় করেন ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থী এবং পর্যটক।
বর্ষাকালে হাওর এলাকায় অবস্থিত গ্রামগুলোকে দূর থেকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। মনে হয় যেন হাওরের পানিতে ভাসছে সেই সব গ্রাম। এ সময় হাওরে চলাচল করে শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এগুলোই বর্ষাকালে হাওর এলাকার বাসিন্দাদের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র বাহন। শত শত রঙ্গিন পাল তোলা নৌকাও বর্ষায় চোখে পড়ে। জাহাজ আকৃতির মালামাল পরিবহনকারী বড় বড় কার্গো, দাঁড় বেয়ে চলা নৌকা ও মাঝিদের কন্ঠের সুরেলা গান এসবই হাওরের অনুসঙ্গ। ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা তো নিত্যদিনকার চিত্র। রাতে নৌকায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখে দূর থেকে মনে হবে যেন গ্রাম্য কুলবধূরা শত শত প্রদীপ জ্বালিয়ে হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। হাওরের পানিতে হাঁসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরা সারাদিন সাঁতার কাটায় মেতে থাকে। চাঁদনী রাতে জোসনার আলোর সঙ্গে ঢেউয়ের মাতামাতি দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। বর্ষাকালে হাওরে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যিই মনোরম! আমাদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতেও হাওরের রয়েছে অনন্য অবদান।
প্রাচীন আখড়া, মন্দির-মসজিদের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে হাওরের সুপ্রাচীন ও গৌরবময় অতীতে স্মৃতিচিহ্ন। এখানকার হিজল-তমাল বন আকৃষ্ট করে সৌন্দর্য পিপাসুদের।
হাওরকে ‘উড়াল পঙ্খির দেশ’ হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়। ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার ধবল বক হাওরে চোখে পড়ে। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সাঁঝের বেলায় মুক্তোর মালার মত সেইসব বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় মুখরিত কল কাকলির কান ফাটানো শব্দ একমাত্র হাওর এলাকাতেই শোনা সম্ভব।
হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দযের্র ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতের মতো হাওর এলাকাও একদিন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদ ভারে মুখরিত হয়ে উঠবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.