কিশোরগঞ্জ

যেমন রুপ তেমনই গুণ সূর্যমুখীর

বাংলার ঐশ্বর্যশীলা রুপ বৈচিত্র্যতা ফুটানোর অনন্য বাহক সূর্যমুখীর বাগিচা।সূর্যমুখী ফুল যেমন শাণিত রুপের স্বপ্নীল কারুকার্য তেমনই অনন্য গুণে ভরপুর এর বীজ। সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। মিষ্টি বাদাম জাতীয় এই বীজে রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপাদান। যেমন- খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড।

জানা যায়,সূর্যমুখীর বীজ শরীরের নানা রোগ সারিয়ে তোলে ও নানাভাবে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে চাষাবাদ হচ্ছে। তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়।

সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেলের চেয়ে ভালো। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম থাকায় হৃদরোগীর জন্য বেশ কার্যকর। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।

আন্তর্জাতিক পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে

  • উন্নতমানের ভিটামিন ই যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত এটি খেলে অস্টিওআর্থারাইটিস, অ্যাজমা ও বাতরোগ নিরাময় হয়।
  • হাড়ের সুস্থতার জন্য ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়াম দুটোই খুব জরুরি। সূর্যমুখীর বীজ খনিজ পদার্থের খুব ভালো উৎস, তাই এটি সুস্থ হাড় গঠনে সহায়তা করে।
  • সূর্যমুখীর বীজে আছে উচ্চমানের ফাইটোস্টেরল ও ক্যান্সার কোষ তৈরি হতে দেয় না।
  • সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ভিটামিন বি-৬ যা মাথার ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এতে করে চুল পড়া কমে ও স্বাস্থ্য উজ্জ্বল নতুন চুল জন্মায়।
  • এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম শরীরের অতিরিক্ত ক্যালশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করাতে সাহায্য করে।
  • এই বীজ আমাদের দেহের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল দূর করে আমাদের হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখে।

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জানিঃ-

  • হাড়ের জোড়ায় ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, দেহের চামড়ায় জ্বালা-পোড়া, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ সারিয়ে তুলতে সূর্যমুখীর তেল খুবই উপকারী।
  • প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় সূর্যমুখী বীজের তেল দুর্বলতা কাটাতে কার্যকরী। সেইসঙ্গে দেহের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতেও সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য।
  • সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদান মানসিক চাপ দূর করে। মাইগ্রেনের সমস্যা এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এই তেল।

কিশোরগঞ্জের উপজেলাগুলিতে কোথাও কোথাও দেখা যায় সূর্যমুখীর চাষ কিন্তু তেমন প্রসারতা পাইনি।
কতক জমিতে যতটুকু চাষ হয়,তার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ছুটে আসে হাজার দর্শনার্থী। সেলফি তুলার হুরাহুরিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় কৃষক।

কিশোরগঞ্জের অসংখ্য চরাঞ্চল ও হাওরের জমিতেও সূর্যমুখী উৎপাদন করা যেতে পারে বাণিজ্যিকভাবে। বিভিন্ন প্রতিকূলতায় অনেক জমিতেই প্রধান খাদ্যশস্য ধান উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। এসব জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে সূর্যমুখী উৎপাদনে আগ্রহী হতে পারেন কৃষকেরা। বাংলাদেশের কৃষিতে বিপ্লব এসে গেছে। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি বিভাগ, কৃষি গবেষণা বিভাগ এখন অনেক স্বয়ংসম্পূর্ণ, কৃষিতে ভর্তুকিও চোখে লাগার মতো। কিন্তু কৃষকদের উন্নতি আসলে সে রকমভাবে হয়নি। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষকেরা বরাবরই বঞ্চিত বলা চলে। কৃষকদের দারিদ্র্যতা দূর করা না গেলে কৃষিতে আগ্রহ হারাবে কৃষিকে পেশা হিসেবে জীবিকা নির্বাহকারী কৃষক শ্রেণি।

কিশোরগঞ্জের কৃষকরা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান। তাঁদের উদ্যমী করা গেলে দারুণ সুফল আশা করা যায়। সূর্যমুখী দেখতে যেমন হাসিখুশি, সূর্যমুখীর বীজের তেলও সুস্বাস্থ্যকর। পুষ্টিগুণে অনন্য।

জেলার হাওরাঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাওরাঞ্চলে ধান চাষ খুব একটা লাভজনক নয়। ধান চাষ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই টাকার ধান পাওয়া যায় না।নিকলী উপজেলার একজন সূর্যমুখীফুল চাষী জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা করা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উপাদন সম্ভব। প্রতি কেয়ারে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি কেয়ারে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজার সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker