” আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ, এত ডাকি তবু কথা, কও না কেন বউ”
আর এ আতা গাছেই জন্মে সুস্বাদু ফল ‘আতা’। মিষ্টি রসে যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এজন্যই কবি বলেছেন মনমোহিনী কথার পঙক্তি।
আতা, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আগে বাড়ির আঙ্গিনা ঝোপঝাড়ে প্রচুর দেখা যেতো আতাগাছ। বর্তমানে এটা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
আতাফলের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যগুণ। এই ফলটি শরীফা এবং নোনা নামেও পরিচিত। হৃৎপিন্ড আকৃতির আতাফলের ভিতরে বীজকে ঘিরে থাকা নরম ও রসালো অংশ খাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান। এছাড়া ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামও আছে আতাফলে।
বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বাজারে আসে আতা। এই ফলটি খেতে পারলে হৃদরোগসহ শরীরের আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
পুষ্টিবিদদের মতে,হৃদরোগীদের জন্য উপকারী, হার্টে যাদের সমস্যা রয়েছে তারা আতাফল খেলে উপকার পাবেন। কারণ এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ভিটামিন সি। যা হার্টের জন্য খুবই উপকারী। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে আতাফল অবশ্যই খাবেন।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে অনেকে মনে করেন, আতাফল খেলে ওজন বাড়ে। এটি কিন্তু একদমই ভুল ধারণা। আতাফল গ্যাস, অম্বল, বদহজম থেকে দূরে রাখে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন বি সিক্স। যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ক্লান্তি দূর করে আতা ফার্টিলিটি বৃদ্ধিতেও কাজে লাগে আতাফল। প্রচুর আয়রন থাকে এই ফলে। যা ক্লান্তি দূর করতে দারুণভাবে কাজ করে। চামড়া, দৃষ্টিশক্তি, মস্তিষ্কের উন্নতি ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে আতাফল।
ডায়াবেটিস রোগীরা আতাফল খাবেন না, আতাফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫৪। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে আতা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কোনভাবেই ডায়াবিটিস রোগীদের আতাফল খাওয়া চলবে না।
ফুল-ফল আর ফসলে ভরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ দেশের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা গাছ গাছালি। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী এসব বৃক্ষরাজির সৌন্দর্য আমাদেরকে যেমন আকৃষ্ট করে তেমনি রয়েছে এর নানা উপকারিতা। বর্তমানে নানা কারণে প্রকৃতির মাঝ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশীয় মূল্যবান এসকল উদ্ভিদরাজি। তেমনি একটি দেশীয় বৃক্ষ হচ্ছে আতাগাছ।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে সুস্বাদু এই আতা ফলটি।
উপকারী এই আতা গাছ হোসেনপুরের একটি পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়ন থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে সড়কের পাশে, বাড়ির আঙিনায়, পুকুর পাড়ে দেখা মিলতো আতা গাছের; কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন আতা গাছ রোপণ না করায় গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিগত দিনগুলোতে কিছু মানুষ আতাফল বিক্রি করে দৈনিক আয় করতেন। আতা ফলের ভিতরে ছোট ছোট কোষ থাকে। প্রতিটি কোষের ভিতরে একটি করে বীজ থাকে। বীজের পাশের রসালো ও নরম অংশই খেতে হয়। কাঁচা ফলের বীজ সাদা হয় ও পাকা ফলের বীজ কালো রঙের হয়। তবে এই বীজ বিষাক্ত। ফলটি লালচে ও সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। এ ফলটিতে রয়েছে নানা পুষ্টি ও ঔষুধি গুণাগুণ।
জানা গেছে, প্রতি ১০০ গ্রামে আতা ফলে রয়েছে- শর্করা ২৫ গ্রাম, জল ৭২ গ্রাম, প্রোটিন ১ দশমিক ৭ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩৩ আইইউ, ভিটামিন সি ১৯২ মিলিগ্রাম, থিয়ামিন ০ দশমিক ১ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০ দশমিক ১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিয়ান ০ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ০ দশমিক ১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩৮২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪ মিলিগ্রাম।