চলছে শীতকাল সকাল ও সাঝে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় মাঠ ঘাট। আজ অগ্রহায়ণ মাসের ৫ তারিখ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে প্রত্যন্ত গ্রামে দিগন্তজোড়া সোনালী ফসলের আবারিত মাঠে সোনার ফসল ফলানো কৃষকেরা মহা ব্যাস্তময় সময় কাটাচ্ছে। মহা ধুমধামে কাটছে আমন ধান। তবে সামনে ইরি-বোরো মৌসুম। তাই কৃষকরা ধানের চারার জন্য বীজতলা প্রস্তুত করছেন। উপজেলার ধান চাষিরা বোরো ধানের বীজতলা তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভালো বীজতলা করতে পারলে তবেই মিলবে ভালো চারা। তাই কৃষক/কৃষানীরা নাওয়া খাওয়ার প্রতি অযত্নবান হয়ে সন্তানতুল্য যত্নে ঘরে তুলছেন
আগুনী (অগ্রয়নী) ধান, পাকা ধানের সুমধুর গন্ধে প্রানে শিহরণ জাগিয়ে নবান্নের উৎসবে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে উস্নময় কোলাহল। আবার বোরো ধানের বীজতলায় মহা মত্ত রয়েছেন মাঠ প্রান্তে ।
জানা যায়, অগ্রহায়ণ মাস বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়। তাই বীজতলায় রোদ পড়ে এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করে চাষীরা। চাষের আগে প্রতি বর্গমিটার জায়গার জন্য ২-৩ কেজি জৈবসার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করে থাকে। পানি দিয়ে জমিকে থকথকে কাদা করে এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে ভেজা বীজতলা তৈরি করা হয়। বীজ বপন করার আগে ৬০-৭০ ঘণ্টা ধান ভালোভাবে জাগ দিয়ে রাখতে হয়। এসময় ধানের অঙ্কুর গজাবে। অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হয়। প্রতি বর্গমিটার বীজ তলার জন্য ৮০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
কৃষাণদের সাথে কথা বলে আরো তত্বমিলে,বোরো ধানের বীজতলার অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় চারা যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য কৃষকরা রাতের বেলা চারার উপরে সাদা পলিথিন দিয়ে বা কলার পাতা দিয়ে খুঁটি বা কঞ্চির সাহায্যে ছাউনির মতো করে ঢেকে দেয়, যাতে করে চারা নষ্ট না হয়। পরদিন সকালে রোদ দেখা দিলে পলিথিন বা কলার পাতা ছাউনি আবার সরিয়ে রাখে রোদ লাগার জন্য। কৃষকরা বীজতলা প্রতিদিন সকালে একবার করে দেখে আসেন, কারণ বীজতলার চারা যাতে হলুদ ও পাতা ঝলসানো রোগে আক্রমণাত্মক না হয়। তাহলে কৃষকরা চারায় ইউরিয়া ও জিপসাম সার দিয়ে থাকে। বীজতলা থেকে চারা তোলার এক সপ্তাহ আগে কৃষকরা কীটনাশক দিয়ে থাকে। এতে বীজতলার চারা পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
হোসেনপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৮হাজার৫শত হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলার বিশ্বনাথ পুর, চরকাটি হারী,, চর জামাইল, চর হাজিপুর, সাহেবের চর, গড়বিশুদিয়া, কোনা মেছেড়া, হোগলাকান্দি, মাঝিবাড়ীসহ প্রতিবেশী এলাকা প্রত্যক্ষদর্শনে মিলে, কৃষকরা ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য পূর্ব প্রস্ততি হিসেবে বীজতলা তৈরী ও বীজতলায় ধান রোপন করছেন। কেউবা ধান চাষের জমি প্রস্তুত করছেন। ব্যাস্ততা যেন কাটছেই না। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষ নিয়ে বিপাকে আছে বলে জানান একজন ব্যাস্ত কৃষান রসূল মিয়া (৪৫)।
অন্য একজন ধান চাষী নাসির উদ্দীন (৩৪) অভিমত প্রকাশ করেন, এ বছর আগের তুলনায় কম পরিমাণ জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন। তেলসহ আনুসাঙ্গিক খরচাপাতি বৃদ্ধিতে বোরো চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকায়।
জৈনেক কৃষকের অভিমত, তেলের দাম বৃদ্ধিতে ধান চাষ অনেক খরচের বিষয়, আমাদের এই অঞ্চলের প্রায় কৃষকই বর্গা চাষী। এদের নিজের জমি নেই, এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করে থাকে। এমনিতেই যে টাকা খরচ করে ধানের চাষ করা হয় ধান বিক্রয় করে সে টাকা আয় হয় না। এছাড়াও প্রতিটি জমিতে পানি সেচের সুব্যবস্থা না থাকায় বেশি টাকা ব্যয় করে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করার সামর্থ্য সবার নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরুল কায়েস জানান, বিগত বছরগুলোতে এ উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ করা হয়। আশা করছি, এ বছরও বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ হবে। তবে তেলের দাম বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি।