বরগুনা

ব্যানারে চেয়ারম্যানের নাম নেই, স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ!

স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান বন্ধের অভিযোগ উঠেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার গোজখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনিরের অনুসারীদের বিরুদ্ধে। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমতলী উপজেলার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস গোজখালী ইউনিয়নে দুদিন ব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। রোববার ছিল উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান। ওইদিন সকালে ইউনিয়নের সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত হয়।

সকাল ১০টায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান শুরু হয়। ওই অনুষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে চলছিল। দুপুর ১টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনিরের ছত্রছায়ায় থাকা শাহিন হাজী, হাসান, বাদল সুজনের নেতৃত্বে ৭-৮ জন লোক এসে ব্যানারে চেয়ারম্যানের নাম না রাখায় শিক্ষকদের গালাগাল করেন এবং ব্যানার ছিঁড়ে নেন। পরে তারা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন।

তাদের কর্মকাণ্ডে মাঠে থাকা শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। শিশু প্রতিযোগী ও অভিভাবকরা তাদের ভয়ে ছুটো ছুটি করে মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যান। সরকারিভাবে আয়োজিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘শাহিন হাজী, হাসান, বাদল ও সুজনসহ সাত-আটজন এসে ব্যানারে চেয়ারম্যানের নাম নেই কেন বলে শিক্ষকদের গালাগাল শুরু করেন। ব্যানার ছিঁড়ে নিয়ে যান। বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন তারা।’

অভিযুক্ত শাহীন ও হাসান বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশে ব্যানার ছিঁড়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি।’

দুই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: জসিম উদ্দিন ও মো: জাহিদ লিটন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ৭-৮ জন লোক মাঠে প্রবেশ করে শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। মাঠে চলমান ক্রীড়ানুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় তারা। আমরা অনুষ্ঠান বন্ধ না করার অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু শোনেনি।

আমতলী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ মো: মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যানারে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নাম না থাকায় তার লোকজন ব্যানার ছিঁড়ে নিয়ে যায়। ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।

আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: সফিকুল আলম বলেন, দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের সোমবার বাকি অংশ হবে।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচ এম মনিরুল ইসলাম মনি ব্যানার ছেঁড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ অনুষ্ঠানের খবর প্রশাসনের কেউ জানে না। তাই ইউএনও ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন।

তার দাবি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। সরকারিভাবে আয়োজিত ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ ও ব্যানার ছিঁড়ে নেওয়ার বিষয়ে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) জালাল উদ্দীন বলেন, বিষয়টি জানা নাই। খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker