বিবিধসারাদেশ

একজন সৎ পুলিশের গল্প

কুতুব আহমেদ যার ডাক নাম চন্দন। তার জন্ম ১৯৭৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি শুধু পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ( পিবিআই) কর্মকর্তাই নয়, একই সাথে তিনি কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, দাতা ও ধর্মীয় ভাবাপন্ন মানবিক মানুষ।

লোকমুখে শুনা যায় ষোলকলা পূর্ণ অষ্টগুণে গুণান্বিত বর্ষিয়ান ব্যাক্তিত্বের অধিকারী তিনি। জনকল্যাণমুখী প্রানের আদলে জীবন ঘঠিত প্রেমময় সরবে স্বচ্ছ অন্তরিক্ষের মানুষ কুতুব আহমেদ চন্দন। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তিনি বুকটান বিকশিত বিচরণ করেছেন। সাহেবের চর গ্রামসহ প্রতিবেশী গ্রামগুলিতেও রচিত আছে তার কৃতিকথা। মানবতা ও মানবিকতার শীর্ষবস্থান দখল করে আছেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে।

সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলেও নৈতিকতা ধরে রেখেছেন অদম্য ইচ্ছা শক্তির দাপটে। কারন শৈশব কালেই একটা মানুষ কে পরিবেশ গ্রাস করে নেয়, কিন্তু তার বেড়ে উঠার সময়কালটা ছিল ঘোলাটে আবহাওয়া পূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা, পরতে পরতে ছিল অন্যায় বিকলাঙ্গতা। তবু তিনি বড় হয়েছেন সুনিপনা গুন সম্পূরক হয়ে।

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদে আবৃত সাহেবের চর গ্রামের হাজীবাড়ী মহল্লায়  তার জন্ম হয়, এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বংশ পরম্পরা হাজীবাড়ীর প্রথম পুরুষ নজু হাজী, তার পুত্র নিধু হাজী, নিধু হাজির পুত্র ইন্তাজ আলী শেখ, তার পুত্র আমির হোসেন, তার পুত্র সিদ্দিক হোসেন এবং সিদ্দিক হোসেনের পুত্র কুতুব আহমেদ চন্দন। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সকল জীবনেই তিনি বলিষ্ঠ গ্রহণ যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ব্যাক্তিগত ও চাকুরীজীবনের সর্বক্ষেত্রেই কুতুব আহমেদ সকলের প্রিয়ভাজন।

“মানুষ অমানুষ” নাটকের স্ক্রীপ্ট বুঝে নিচ্ছেন পিবিআই কর্মকর্তা কুতুব। ছবি- সোহান আহমেদ

এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষজনের সাথে কথা বলে মিশন ৯০ জানতে পারে, তিনি খুব সহজ মনের মানুষ। বংশীয় যুবকরা তাকে মানবতার আইকন মনে করে থাকেন। তার প্রেরণা পেয়ে হাজীবাড়ীতে ১০৩ জন সদস্য বিশিষ্ট, যুবকদের মানবিক মনের ঐক্য প্রকাশ “মানবিক কান্ডারী যুব শক্তি” নামে সংঘটিত হয়েছে একটি অরাজনৈতিক মানবিক সংগঠন।

কুতুব আহমেদ চন্দন  সম্পর্কে অনুসন্ধান করে  আরো জানতে পারি, মানবসেবায় তিনি দুর্দান্ত সবল পুরুষ। অসহায় ও হতাশাগ্রস্থ মানুষের উত্তরণে তিনি নিবেদিত প্রাণ। কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মের বাহিরে, মানুষের উপকারে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিতে কুন্ঠিত বোধ করেন না কখনো।মহামারী করোনার জবর দখলে যখন সারা দুনিয়া, নিদারুণ কান্নার করুন ধ্বনিতে নিমজ্জিত, কষ্টের গোদাম ঘরের অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাময় তখন তিনি অনাহারী মানুষদের মুখে নিজ অর্থায়নে তুলে দিয়েছেন সাধ্যমত খাবার, বস্ত্র। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার নিজের লেখা সচেতনতা মুলক কবিতা, আবার অনেক শিল্পির কন্ঠে শোভা পেয়েছে করোনার সচেতনতা মুলক গান যা তার নিজের লেখা ও সুর করা যা প্রকাশ পেয়েছে এসএআর মিউজিক ওয়ার্ল্ড এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। পাশাপাশি বহু সল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে নিজে অভিনয়ের মাধ্যমেও সচেতন করেছেন দেশবাসীকে। একজন পিবিআই কর্মকর্তার মানব সেবাই এতো আয়োজন ভাবা যায়?

মিশন ৯০ কে তিনি বলেন, “আমি পিবিআই এ কর্মরত আছি ইচ্ছা করলে অঢেল টাকা পয়সার মালিক হতে পারতাম। কিন্তু জীবনে কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি করবোও না কখনো। আমি মহান স্রষ্টা আল্লাহ ছুবাহানাহু তায়ালাকে ভয় করি, আসছি একদিন যেথে হবে দুনিয়া থাকার যায়গা না। তাছাড়া ছাত্র জীবনেই হক্কানি পীরের কাছে বায়েত গ্রহণ করেছি। আমার পির সাহেব কখনো আমাদের কে লোভের শিক্ষা দেয়নি। আমার বাবাও কখনো লোভ লালসার কাছে আপন সত্বাকে বলিদান দেয়নি। যতদিন বাঁচি ন্যায়ের সঙ্গ নিয়েই বাঁচবো, আর যতটুকু পারি জনগনের সেবা করে যাবো ইনশাহ্ আল্লাহ।

নির্ভরযোগ্য তত্ত্ব মতে- কুতুব আহমেদ চন্দনের পাঁচ ভাই ও তিন বোনদের মধ্যে তিনি 8র্থ তম। কিছুদিন গতহল তার পিতা সিদ্দিক হোসেন বার্ধ্যকজনিত কারনে পরলোকগমন করেছেন। সিদ্দিক হোসেন ছিলেন দশ গ্রামের দরবারি ( মাতব্বর) মানুষ।

জানা যায়- নিজ এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাকে খুব সুমিয় এবং মান্য করতো, নিতান্ত পরোপকারী মানুষ ছিলেন।

১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর রাজশাহী জেলার এক মেয়ের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সাংসারিক জীবনে কুতুব আহমেদের দুই ছেলে তাশফিক আহমেদ অনিক (মেডিকেলের ছাত্র) ও মাসফিক আহমেদ অহিন।

জানা যায়- ছোটবেলা থেকেই তিনি সংস্কৃতিমনা, ২০২০ সালের ১২ই এপ্রিল, জনপ্রিয় তরুণ সংগীত পরিচালক সোহান আহমেদের সংগীত আয়োজনে, সাইদুর রহমান ইমন (ইমন বাউলা) এর কন্ঠে এসএআর মিউজিক ওয়ার্ল্ডে মুক্তি পায় কুতুব আহমেদ এর লেখা ও সুরে প্রথম গান “মরণব্যাধী কোভিড-১৯”। আবার একই মাসে মিজানুর রহমানের ভোকালে এসএআর এইচডি মিডিয়াতে “করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের জীবন” শিরোনামে তার লেখা প্রথম প্রতিবেদন রিলিজ হয়। বহু মঞ্চ নাট্যে অভিনয়ের রয়েছে বেশ সুনাম। অভিনয় ক্যারিয়ারে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় ২০১৬ সালে সোহান আহমেদের পরিচালনায় ততকালীন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমান বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু নাসার উদ্দিনের তত্বাবধানে ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত বাল্যবিবাহের উপর সচেতনতা মূলক নাটক “পরিণতি”র শুটিংএ। যা রিলিজ হয় ২০১৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এসএআর এইচডি মিডিয়ার‌ ব্যানারে। মূল চরিত্রে থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিপ্রাপ্ত তারা টিভি এইচডিতে প্রচারিত “মানুষ অমানুষ” স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। কবি বন্ধু সাহিত্য পাতা থেকে খুব শিগগির তার লেখা কবিতার বই বের হতে যাচ্ছে। চিটাগাং এ তিনি ইনভাইট পেয়েছেন পিকনিকের, যেখানে বাংলাদেশের সকল কবিদের অংশগ্রহণ থাকবে আগামী জানুয়ারী মাসে।অন্যদিকে শতব্যস্ততার মাঝেও গান লিখে যাচ্ছেন রেডিও সেন্টারে দেয়ার জন্য  ৫০ টা গান চেয়েছেন রেডিও কতৃপক্ষ।

স্বীয় কর্মকে ভালোবেসে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ২০২০ সালের এপ্রিলের ৪ তারিখ কুতুব আহমেদ এর একটি লেখা পত্রিকায় প্রকাশ পায়, যা তুমুল আলোরণ সৃষ্টি করেছিল নিম্নোক্ত উল্লেখ করা হল-

“একজন পুলিশ কর্মকর্তার চোখে করোনা ভাইরাসে পুলিশের জীবন”

করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সারা বিশ্ব যখন দিশেহারা, সকল শ্রেনীর মানুষ যখন গৃহবন্ধি,উন্নত দেশগুলি যখন ঘর থেকে বাহির হলেই মোটা অংকের জরিমানা করছে। সেই পরিস্থিতিতে আপনাদের টাকায় যাদের বেতন হয়,যাদেরকে আপনারা গালি দেন, যারা ভাল কাজ করলে আপনাদের চুলকানি হয়, যারা নিজের জীবন বাজি রেখে পরিবারের কথা চিন্তা না করে দিন রাত করোনা মোকাবেলায় কাজ করছে, দেশের মানুষকে করোনা মুক্ত রাখতে সচেতন করছে, নিজের বেতনের টাকা দিয়ে খাবার কিনে বাসায় পৌছে দিচ্ছে এই অমানুষ বাংলাদেশ পুলিশ গুলোর কথাই বলছি। এই করোনা মোকাবেলায় যখন এক শ্রেনীর মানুষ বলছেন পিপিই ছাডা কাজ করা সম্ভব নয় আসলে সত্যি কথা আমার জীবন যখন মৃত্যু মুখে তখন চাকুরী টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে? আগে নিজে বাচঁতে হবে। আর এই নির্বোধ গালি খাওয়া মানুষ গুলো কি করছে জানেন? তারা পিপিইর কথা চিন্তা না করে মৃত্যুর কথা চিন্তা না করে নিজের টাকায় কেনা ৫ টাকার মাক্স পরে রাস্তায় নেমে পরেছে।
পুলিশের অনেক দায়িত্ব আছে তবে করোনায় মৃত্যুবরণ ব্যক্তির দাফন করা, গৃহবন্ধী মানুষের ডিটারজেন পাউডার, কফির প্যাকেট, কাঁচা বাজার করে দেওয়া তো দায়িত্ব নয়। কি জন্য করছেন এসব? বেতন আর চাকুরী রক্ষার জন্য নয়। এটাই দেশ প্রেম, দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা, মানবতা আর মানবিকতা। কারন দেশ ও জনগনের জানমাল রক্ষার জন্য শপথ নিয়ে এই পুলিশ বাহিনীতে আসা। সবাই যখন ঘরের মধ্যে নিজের জীবন বাচাঁতে ব্যস্ত তখন পুলিশ গুলো রাস্তায় নিজের খাবারের কথা চিন্তা না করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন কে না খেয়ে আছেন। পুলিশ যদি করোনা আক্রান্তে মৃত্যুর কথা চিন্তা করে ঘরে চলে যান তাহলে কি হবে আমার দেশের ১৮ কোটি মানুষের? ভয় নেই আপনাদের নিরাপদে রাখতে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমরা আছি রাস্তায়। ১৯৭১ সালে আমরাই প্রথম ঝাপিয়ে পরেছিলাম হানাদার হায়না বাহিনীর উপরে। বঙ্গবন্ধুকে যখন স্ব-পরিবারে হত্যা করে তখন ভারী অস্ত্রের সামনে সামান্য ছোট একটা পিস্তল নিয়ে প্রথমেই গেইটে বাঁধা দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন আমাদের এএসআই জনাব সিদ্দিকুর রহমান। আপনার স্বীকার না করতে পারেন তবে দেশের দুর্যোগে পুলিশের ইতিহাস সর্বাজ্ঞে। আমরা নায়ক হতে চাইনা আমরা জীবন দিয়ে মানুষের সেবা করতে চাই দেশকে ভালবেসে উন্নত দেশে নিয়ে যেতে চাই, আগামীর প্রজন্মকে উন্নতশীল দেশ উপহার দিতে চাই। করোনা মোকাবেলায় সবাই ঘরে থাকুন, নিজে সুরক্ষা থাকুন সবাইকে সুরক্ষিত রাখুন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker