চট্টগ্রাম

সৎ সাহস-ই হতে পারে প্রতিবাদের ভাষা – কামাল পারভেজ

প্রতিবাদ শব্দটি সামনে আসলেই মনে পড়ে কামাল পারভেজ এর কথা। আর কে সেই কামাল পারভেজ। চট্টগ্রাম সাংবাদিক মহলে প্রতিবাদী সাংবাদিক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। দৈনিক খবর গ্রুপ অব পাবলিশার্স থেকে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তী দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক অর্থনীতির কাগজ এর ব্যুরো প্রধান’র দায়িত্ব পালন করেন।

২০১০ সাল থেকে ঢাকায় “ট্রাষ্ট অব হিউম্যান রাইট বাংলাদেশ” নামক একটা মানবাধিকার সংগঠনের নির্বাহী প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি দৈনিক ঢাকার ডাক একটা পত্রিকা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও করা সমালোচনা করেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মানবাধিকার সংগঠন ও পত্রিকা থেকে একই সাথে নিজেই অব্যাহতি নিয়ে নেন। ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারী মাস থেকে দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকা যোগদান করে আবারও সাংবাদিকতা পেশায় ফিরে আসেন।

তবে প্রতিবাদ থেমে থাকেনি। যেটা তার কাছে অন্যায় মনে হয়েছে সেখানেই প্রতিবাদ গড়ে তুলার চেষ্টা করেন। কেউ সাথে থাকুক বা না আসুক তাতে কিছুই যায় আসে না। তবে মফস্বল পর্যায়ে তৃণমূল সাংবাদিকদের পক্ষে সবসময় কথা বলেন। কোভিড এর সময় প্রণোদনা হিসেবে সরকার তিন কোটি টাকা সাংবাদিকদের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্টে দেওয়া হয়, সেখানে আওয়ামী পন্হী বিএফইউজে নেতারা তাদের মনগড়া ইউনিয়ন সদস্যদের নিয়ে একটা তালিকা দেওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে তৃনমুল পর্যায়ের সাংবাদিকরা কেউই পাবেন না।

ঠিক তখনই “কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি বর্তমান সাংবাদিক পেশা” এই শিরোনাম একটা কলাম লিখেন। মুহুর্তে কলামটি প্রায় ৩০-৩২ টি অনলাইন পোর্টাল ও ইংরেজি পত্রিকা দ্যা ডেইলি মর্নিং অবজারভার – এ কলামটি প্রকাশিত হয়। সেই কলামে ততকালীন নামধারী কতিপয় সাংবাদিক নেতা শাবান মাহমুদ সহ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। কামাল পারভেজ তখন একটা দূর সাহসিক ভূমিকা রাখে। সেই প্রণোদনা আটকে যায়।

পরে বাড়িয়ে ৭ কোটি টাকা দেওয়া হলে মফস্বলে থাকা তৃণমূল অনেক সাংবাদিকরাও এই প্রণোদনা পায়। এটা অবশ্যই কামাল পারভেজ’র মেধা ও প্রতিবাদের ফসল হিসেবে তৃনমূলের প্রাপ্যতা পায়। বৈষম্যতার বিরুদ্ধে সবসময় তার প্রতিবাদ কণ্ঠ অবিচল থাকে। যেমন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (আওয়ামী পন্হী) এর বিরুদ্ধেও বৈষম্যতা নিয়ে ২০২০ সালেই শ্রমিক অধিদপ্তরে (লেবার অফিস) অভিযোগ দায়ের করেন। প্রতিবাদ থেকে পিছু হাটতে রাজি নন কামাল পারভেজ। কামাল পারভেজ যে শুধু সাংবাদিক তা নয়, কলামিস্ট, কবি ও সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত।

২০২১ সালে বইমেলাকে কেন্দ্র করে “হায়রে বাংলাদেশ” ও “স্বাধীনতার খোঁজে” নামক এক সাথে দু’টি কাব্যগ্রন্হ প্রকাশিত হয়। আবারও তুলপার হায়রে বাংলাদেশ কাব্যগ্রন্হটি পুরো আওয়ামী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র নিয়ে কবিতা লেখা। সেই সময় কামাল পারভেজ অনেকটা চাপ সহ্য করতে হয়। তারপরও ধমে যান নি ২০২৩ সালে বইমেলায় প্রবন্ধ সংকলন “দহকালের ক্ষরণ” প্রকাশিত হয়। ২০২৩ সালে নভেম্বর মাসে আবারও আওয়ামী স্বৈরশাসকের ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে “হাতকড়া” নামক কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ করেন।

দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকা ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও সবাই জানেন এই পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান একজন আওয়ামী সরকারের দালাল হিসেবে খ্যাত, কিন্তু কামাল পারভেজ ছিলো তার বিপরীতে সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার সাহসিকতার মনোভাব অতুলনীয় ছিলো। প্রতিবাদের ভাষা ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়েও চেরাগি মোড় সাংবাদিক মহলে ছিলো চায়ের আড্ডার ঝড়। নিরব প্রতিবাদ যেনো সাংবাদিক মহলে আতংক সৃষ্টি করত। এই হচ্ছে সেই কামাল পারভেজ। দেশের বাইরে থেকে অনেক বড় বড় কথা বলা যায় কিন্তু সামনাসামনি প্রতিবাদের জায়গা তৈরি করা অনেক কঠিন। সেই জায়গা তৈরি করতে বিন্দুমাত্র পিছু হটেননি কামাল পারভেজ।

কামাল পারভেজ এর সাথে আলাপের মধ্যে বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় ততকালীন সেনাপ্রধান মঈনইউ আহমেদ। তারপর থেকে টানা তিনবার ক্ষমতায় আসে রাতের ব্যালট চুরির মাধ্যমে। যাকে ভোট ডাকাতির সরকার বলে জনগণ বলত। পরবর্তী চারবার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী স্বৈরশাসক ভাবতেই পারেননি ক্ষমতা কোনো চিরস্থায়ী নয়। এটা পাপের ফসলও বলা যায়। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার বিপরীতে হাইব্রিড আওয়ামী পন্হী সাংবাদিকরা একটা বৈষম্যতা তৈরি করে ফেলেছে। এটা শুধু সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে নয় পুরো সিস্টেমের মধ্যেই বৈষম্যতা ঢুকে পড়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের একটাই কাজ করতে হবে সেটা হলো সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে পড়া বৈষম্যতা দূর করতে হবে। একটা বৈষম্যহীন সমাজতান্ত্রিক দেশ গঠনের চেষ্টা চালাতে হবে। পরবর্তী নির্বাচন হলেও একটা ঐক্য প্লাটফর্মের মাধ্যমে ঐক্য সরকার গঠনের প্রচেষ্টা করতে হবে, তাহলেই কিছুটা হলেও দুর্নীতি রোধ করা যাবে।

প্রতিবাদ সম্পর্কে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে বলেন, সৎ সাহস-ই হচ্ছে প্রতিবাদের ভাষা। অসৎ ব্যাক্তি কখনো প্রতিবাদ করতে পারে না। নির্লজ্জের মতো তারা সিন্ডিকেট তৈরি করে, চাটুকারিতার মধ্য দিয়ে তারা সুযোগ সন্ধানী হয়। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন দীর্ঘদিন ধরে এই প্রেসক্লাবে একটা বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছে। এই বৈষম্যের প্রতিফলন ঘটতে শুরু হয়েছে। তবে ৫ আগষ্টের ঘটনার পর ৬ থেকে ১০ আগষ্টের মধ্যেই চাইলে প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটি ও সিনিয়র সাংবাদিক শ্রদ্ধাভাজনরা বসে সমাধান করতে পারতো।

কিন্তু সেখানেও দেখা গেছে নির্বাহী কমিটির কয়েক সাংবাদিক সদস্যের দাম্ভিকতা অহমিকার কারণেই প্রেসক্লাবে তালা ঝুলছে। ৬২ বছরের ঐতিহ্য প্রেসক্লাবকে কলঙ্কিত করেছেন প্রেসক্লাবের সদস্যরাই। এটা আসলেই দুঃখজনক। আমি মনে করি সাংবাদিক যদি জাতির বিবেক ও দর্পণ হয় তাহলে তাদের মধ্যে কেনো এতো বৈষম্য থাকবে। একটা প্লাটফর্মে আসতেই হবে আজ না হয় কাল। জাতির কাছেও দায়বদ্ধতা থেকে সাংবাদিক কখনো এই বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে না। তা – না হলে একদিন জনতার কাঠগড়ায় সাংবাদিক নামক বিবেককে দাঁড়াতে হবে।

Author

মোহাম্মদ ইসমাইল (ইমন), স্টাফ রিপোর্টার

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এলাকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker