কিশোরগঞ্জ

গরিব যেন ভিন্ন কোনো ধর্ম

লেখক:-মাহফুজ রাজা:
“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্নিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর এ উক্তিটি চিরন্তন বলে ধরে নিলে ভুল হবেনা।যার সামর্থ্য নেই সে বুঝে ক্ষুধার যন্ত্রণা কতো তীব্র হতে পারে। পৃথিবীতে আজীবন গরীব থাকা আজন্ম পাপ বলা যায়। বর্তমান সমাজে গরিব যেন এক চির অবহেলার নাম। পানি যেমন নিচ দিকে গড়ায় তেমন সর্ব দোষের দোষি, ভাগ্যহীন যেন গরিবরা-ই। রাস্তায় চলাচলে একটা মোটর সাইকেল রিক্সাকে ধাক্কা দিলেও দোষটা হতভাগা রিক্সারই হয়। গরিবের জন্য বর্তমান সমাজ ব্যবস্তায় সমবেদনা নয় বহাল আছে ধিক্কার। পদে পদে লাঞ্ছিত হয়,বঞ্চিত হয়,অবজ্ঞা অবহেলা, নির্মমতার শিকার হয় গরিব।গরিবের দূর্দিনে সদয় অনুভূতি নিয়ে পাশে কেউ দাঁড়ায়না বরং ১০০ টাকার কম্বল অথবা কেজি/দেড়কেজি চাল উপহার দিয়ে ছবি তুলে ১০ জন,এযেন নতুন বিলাসিতায় পরিনত হয়েছে।
Image
মানবিক কর্মী এস এম মিজানুর রহমান মামুন এর উক্তিটি গরিবের স্বপক্ষে জোরদার জানান দেয়,তিনি বলেন যুগযুগ ধরেই বৈষম্যের শিকার গরিব বা স্বক্ষমতা হীনরা অধিকাংশ মানুষের,গরিবের প্রতি আচরণে মনে হয়,গরিব যেন আলাদা কোনো ধর্ম।এ মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে গরিবদেরও আছে বাঁচার অধিকার, গরিবরাও মানুষ। দেশের উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে গরিবের শ্রম,ঘামের মূল্য অনস্বীকার্য। 
Image
মহান স্রষ্টার কাছে গরিবের মূল্য থাকলেও সমাজে বড়ই অবহেলা অবজ্ঞার শিকার গরীব।দিন যায় দিন আসে অর্থনীতির উন্নতি হয়। কিন্তু লাভ হয় কেবল বড়লোকদেরই। গরিব মানুষের জীবনে কোনো উন্নতি নেই। 
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে   ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। পৃথিবীতে ধনীর ধনভাণ্ডার যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই পরিমাণ ধনভাণ্ডার যদি গরিব দূর করার কাজে ব্যবহার হতো তাহলে বিশ্বে আর ধনী-গরিব ভেদাভেদ থাকত না।
খ্রিস্টপূর্ব সাড়ে চারশ’ বছর আগে এথেন্সে বসে দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, শহরের আকার যত ছোটই হোক না কেন, তা মূলত দুভাগে বিভক্ত। ধনী আর গরিব। ধনী-গরিবের এই বৈষম্য দিন দিন বাড়ছেই। এই দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ চলবেই।
অনেকে গরিবদের নিম্ন মানুষ বলে থাকে।আসলে কাউকে যদি ‘নিম্ন’ তকমা দিতেই হয়-  তাহলে অসৎ মানুষদের নিম্ন বলা উচিত । যারা ঘুষ খায় -তারা নিম্ন, যারা খাদ্যের মূল্য বাড়িয়ে গরিবদের কষ্ট দেয়- তারা নিম্ন; যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে- তারা নিম্ন, যারা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে নিজের মনে করে মেরে দেয় তারা নিম্ন, যারা সমাজে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে- তারা নিম্ন।
গরিব মানুষই কি ‘নিম্ন’ মানুষ? গরিব মানুষকে কেন ‘নিম্ন’ বলে ডাকতে হবে? নিম্ন শব্দের অর্থ নীচু বা নীচ। যেই মানুষগুলো। ‘উচ্চ’দের সেবায় সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন তাদের ‘নিম্ন’ বলা হয় কেন?
এ ব্যাপারে সাংবাদিক সাগর আহমেদ বলেন,গরিব মানুষ ‘নিম্নশ্রেণি’ নয়। তারা জোগানদাতা। তাঁরা না থাকলে আপনার-আমার চাকা ঘুরবে না।
বিদ্যমান তীব্র ভেদাভেদ নিয়ে অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ বলেন,আমরা আজ হিংসা, অহঙ্কার আর স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। সত্যি বলতে আমাদের এখন ‘আমরা’ বিষয়টা নেই। আমরা প্রত্যেকেই আমিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। কেউ কষ্ট পাচ্ছেন, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, কেউ বা রাস্থায় পড়ে আছেন মুমূর্ষু অবস্থায়। কিন্তু এতে আমার আপনার কী? হ্যাঁ আমাদের এখন এই প্রবণতা কাজ করে। এটা সত্যি, দু’চোখে দেখা বাস্তব দৃশ্য।ধুঁকে ধুঁকে মরছে হাজারও গরিব, বেওয়ারিশ, ঠিকানাহীন হয়ে পড়ে আছে রেললাইনের পাশে,রাস্তার ধারে,হাসপাতালের বারান্দায় দেখার সময়টুকুই নেই কারও।
মানবতার এ অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে
ধনি-গরিবের বৈষম্য দূর করতে মনে ধারণ করা জরুরি গরিবরাও মানুষ। 

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker