সাহিত্য

বই লিখছি, জীবিত অবস্থায় প্রকাশ হলে ছেলেশুদ্ধ আমাকে মেরে ফেলবে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সবকিছু নিয়ে বই লেখা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক উপাচার্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তবে জীবিত অবস্থায় বইটি প্রকাশ পেলে ছেলেসহ তাকে মেরে ফেলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের ভোট দিতে এসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

বর্তমান প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ফারজানা বলেন, ‘ইতিহাস অন্য রকম। এখন আমি সেই ইতিহাস লিখছি। আমার জীবদ্দশায় আসবে না। লিখে এমন জায়গায় বস্তাবন্দি করে রাখবো যে কেউ পাবে না। আমার জীবদ্দশায় প্রকাশ পেলে এরা আমাকে তো মারবেই, আমার ছেলেকেশুদ্ধ মারবে।’

দেশের প্রথম এ নারী উপাচার্য আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার সময় এত আন্দোলন কেন হয়েছে? এখন একবেলা আন্দোলন হয় না। প্রো-ভিসিরাও আমাকে প্রোটেক্ট করেনি, প্রক্টরও আমাকে প্রোটেক্ট করেনি৷ আমি কি এতোই খারাপ ছিলাম?’

তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের ব্যাপারে ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘দুদক তদন্ত করেছে না কে করেছে, কোন দিল আফরোজা বেগম (ইউজিসি সদস্য) কী বলেছে সেসব আমার কানে এসেছে। উনি তো আমাদের সবকিছুতেই বাধা দেন। দর্শন বিভাগে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের বোর্ডটাকে তিনি বাধা দিয়েছিলেন নিয়মকানুন জানেন না বলে। আমরা হাইকোর্টে আপিল করে সেটা ছাড় পাই। সবসময় যে ইউজিসির মেম্বাররা আমাদের চেয়ে বেশি জানেন এটা নয়। কেন-না উনারা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়েনই না। পাবলিক ইউনিভার্সিটির স্ট্যাটিউটগুলোর কিছু জানেনই না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন নিয়ে সাবেক এ উপাচার্য বলেন, ‘প্রক্টর আমাকে সেসময় রক্ষা করেননি। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনকে রক্ষা করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রশাসন কীভাবে এসেছিল? প্রো-ভিসি কীভাবে হয়েছেন তিনি। তিনি ভিসি হওয়ার সময় আমি কী তার জন্য সুপারিশ করিনি?’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি অংশ একীভূত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুটি অংশ ভেতরে ভেতরে এক ছিল। এখন প্রকাশ্যে এক হওয়ার অনুমতি পেয়েছে। অনেক সময় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা হয়তো অনুমতি দেন-না বলে এক হতে পারে না। কিন্তু আদর্শগত দিক থেকে তো আগে থেকেই এক ছিল। এখন একটা সুযোগ হয়েছে এক হওয়ার, এটা ভালো।’

শিক্ষা বিভাগের অডিট নিয়ে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘অডিটের প্রশ্নটিই একটি অবান্তর। এর উত্তর তারা যেভাবে দিয়েছে আমি মনে করি সেটাই জাস্টিফাইড।’

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সেসময় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুই কোটি টাকা যেটা ছাড়ই হয় নাই তখন পর্যন্ত, সেইটা আমি খরচ করে ফেললাম আমার হাত দিয়ে এইটা বলা তো ঠিক না। সেইটা যদি আমার সময়কালে কেউ করে থাকে কাউকে খুশি করতে, এর দায়-দায়িত্ব তো আমি নেবো না।’

নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ২০১৪ সালের ২ মার্চ প্রথম মেয়াদে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। প্রথম মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হন তিনি। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনা ও ভিসিবিরোধী আন্দোলনের মুখে পড়েন তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker