কিশোরগঞ্জ

জামাই ধানের গন্ধে কৃষক ভাসছে আনন্দে

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দিগন্তের বিস্তৃত মাঠে মাঠে রোপা আমনের ক্ষেত। মাঝে মাঝে এক চিলতে জামাই সুহাগা আতব ধান। দক্ষিণা বাতাসে সুবাস ছড়াচ্ছে জামাই সুহাগা সুগন্ধি চিনি আতব ধান। রঙিন ধানের গন্ধে মাতোয়ারা কৃষকের মন। এবার কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে জামাই সুহাগা সুগন্ধি চিনি আতব ধান।

শনিবার (১২ নভেম্বর) সরেজমিনে, উপজেলার পোড়াবাড়িয়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়,কৃষক খলিল মিয়া মধ্য দুপুরে জামাই সোহাগা সুগন্ধি চিনি আতবের টানে,প্রচন্ড রুদ্রেও ছাতা মাথায় দিয়ে এক চিলতে রঙ্গিন ধানের পানে তাকিয়ে আছেন।তিনি বলেন,অল্প একটুখানি খেতে এই ধান করছি,ফলন ভালা অইছে,তাই অন্য খেতের থাইক্কা এ ধানের প্রতি খেয়ালটা বেশি রাহি।মন চায় বারবার জামাই সোহাগা ধানখেত দেখবার আইতাম।

জানা যায়, নবান্নের আগমনে কৃষকের বাড়িতে পিঠার ধুমধাম শুরু হয়। সেই সাথে বাড়িতে জামাইয়ের আগমন ঘটে। তাই জামাই আপ্যায়নের জন্য সুগন্ধি চাল বা আতপ চাল প্রয়োজন। সেই থেকেই কালো ধানকেই জামাই ধান বলা হয়। এ চলতি মৌসুমে সুগন্ধী চিনি আতব /জামাই ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাই আবহাওয়া অনুকুল ও পোকার আক্রমণ কম থাকায় চলতি মৌসুমে ক্ষেতে চিনি আতব/জামাইয়ের কালো ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। জামাই আতবের চাহিদা থাকায় বাজারে দামও ভাল। আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলেও চিনি আতব কৃষকের ঘরে উঠতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। সময় লাগলেও আতবেই স্বপ্ন বুনছে কৃষক।

সাহেবের চর গ্রামের কৃষক, শাকিল আহমেদ,বাহার উদ্দিন, সায়াম উদ্দিন,মোলহেক,আজিজুলসহ আমাদের কথা হয় আরও অনেক সোনা ফলানো কৃষকদের সাথে তারা জানান দেয় এবছর সফলতার গল্প। কিন্তু কয়েক বছরে জামাই আতব চাষ করে পথে বসেছিল কৃষক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর পোকার আক্রমণের কারণে ঘরে ধান তুলতে পারেনি কেউ। কিন্ত গত বছর থেকে আবার আতব চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। উপজেলার পূর্ব দ্বীপেশ্বর গ্রামের কৃষক হেলাল, কুড়িমারা গ্রামের ইদ্দীস আলী জানান, অন্য মোটা ধানের তুলনায় জামাই আতব ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এবং বাজারে জামাই আতবের চাহিদা বেশি থাকায় অনেকে এবার মোটা ধানের পাশাপাশি আতব চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ২শত হেক্টর জমিতে জামাই আতপ ধান চাষ হয়েছে।

উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের হোগলা কান্দি গ্রামের হেলাল মাস্টার বলেন, ‘বীজ তলা থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হবে ৫-৬ হাজার টাকা। এবার আশা করছি ধানের ভাল ফলন পাওয়া যাবে, বিঘা প্রতি প্রায় ১৫ থেকে ১৬ মণ পর্যন্ত। এতে বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ বিক্রি হবে দেড় হাজার থেকে ১৬শ’ টাকা। হিসাব অনুযায়ী বিঘা প্রতি প্রায় লাভ হবে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, নতুন ধানের গন্ধে ভরে উঠবে মন।

উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের নামা সিদলা গ্রামের কৃষক মিনু জানান, ধান বিক্রি করে কিনে দেয়া হবে ছেলে মেয়ের নতুন জামা, জুতা, বই, খাতা, কলম। এছাড়াও নতুন ধান পেয়ে শীতের পিঠা উৎসবে মেতে উঠবে গ্রামের কৃষক। তাদের মতো উপজেলার অনেক কৃষক এবার চলতি মৌসুমে লাভের আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: ইমরুল কায়েস বলেন, অন্যান্য বছর বৃষ্টির পানির সঙ্কট থাকলেও চলতি বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানির অভাব থেকে কিছুটা মুক্ত ছিল কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চিনি আতপ ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে লাভের মুখ দেখবেন কৃষকরা এমনটাই আশা করছেন তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker