কিশোরগঞ্জ

প্রতিবন্ধী জালালের বাঁশ-বেতের প্রশংসনীয় কর্ম

“তোমার পরিশ্রমের ফল হলো সবচেয়ে বেশি মিষ্টি স্বাদের”

দিপিকা পান্ডুকের এ উক্তিটা বাক-প্রতিবন্ধী জালালের মত জীবনের সর্বাবস্থায় কর্মচ্ছা কিম্বা কর্মযজ্ঞতা অথবা কর্মের প্রতিফলন ঘটানোর মানুষগুলির ক্ষেত্রে ফলিত।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের বাক-প্রতিবন্ধী জালাল উদ্দিন (৬১)। জন্ম থেকেই বাক-প্রতিবন্ধী জালাল। মূলতঃ তিনি কৃষি পেশার সাথে জড়িত,কৃষি কাজ করে বাকি সময়টা বাঁশ-বেত নিয়ে সারাক্ষণ কর্মে ব্যস্ত থাকেন জালাল। কোনো কাজেই পিছুটান নেই তার। অসাধারণ প্রতিভায় সে বাংলা বর্ণ দেখে দেখেই শিখে ফেলে তার নাম ও ঠিকানা। কে আমরা? পরিচয়টা অঙ্গ ভঙ্গি কিম্বা সাংকেতিক মাধ্যমে বুঝাতে হয়নি,পরিচয় পত্র দেখাতেই তিনি বুঝে নেয় আমরা সাংবাদিক।তার কোমল শৈল্পিক আচরণ বিমোহিত করে আমাদের।

কোনো হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন হলেই মাটিতেই লিখতে শুরু করে জালাল। কিশোর বয়স থেকেই যেকোনো জিনিস দেখে প্রায় অনুরূপভাবে তৈরি করার চেষ্টা করে। কৈশোর থেকেই জালাল বেছে নেয় বাঁশ-বেতের কাজ।এমনটিই বলেন স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা।

স্থানীয় যুবক জুনায়েদ, মামুনসহ অনেকেই বলেন,পরের ওপর বোঝা নয়, নিজ কর্মে ভালোভাবে বেঁচে থাকা যায়। এই বিশ্বাস থেকেই মেধা ও পরিশ্রমের সমম্বয়ে বাঁশ-বেত দিয়ে হাঁড়ি পাতিল রাখার মাচাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন তিনি।বাক প্রতিবন্ধী হলেও তিনি অন্যদের থেকে পিছিয়ে নেই।

জানতে পারি,জালালের জন্ম জিনারী ইউনিয়নের চরকাটিহারী গ্রামে। সে মৃত হালীম উদ্দিনের ছেলে।জালালের অন্য আরেক ভাই প্রতিবন্ধী।

সংসারের কাজের ফাঁকে স্ত্রী নাজমাও এসব জিনিস তৈরির কাজে সহায়তা করেন স্বামী জালালকে। তাদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলেরা বিবাহিত ও আলাদা সংসার করে বসবাস করেন।

তার স্ত্রী নাজমা জানান, বর্তমানে আসবাবপত্রের আধুনিক ছোঁয়া গ্রামাঞ্চলেও লেগেছে। ফলে এখন হাঁড়ি পাতিল রাখার বাঁশের মাচার কদর কমে গেছে। তবুও থেমে নেই তার কর্ম। প্রতিদিন কৃষি কাজের পরে বাকি সময়টা ব্যয় করেন বাঁশ -বেতের কাজে।জানতে চাইলে তিনি আরও জানান,অনেক অপেক্ষার পর একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হয়েছে।

স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শরিফুল আলম (কাজী আলম) জানান,মাথায় করে মাচা ও বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন জিনিস উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন জালাল। একটি মাচা বিক্রয় করা হয় ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এতে তার মাসিক আয় হয় গড়ে ১০ হাজার টাকা।এ ছাড়াও কেউ বাড়ীতে বাঁশ দিয়ে গেলে ১০০ শত টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হাঁড়ি পাতিল রাখার মাচা তৈরি করে দেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক, আলোচিত গণমাধ্যম “আমরার নিউজ” এর সম্পাদক,ও দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকার হোসেনপুর উপজেলা প্রতিনিধি এবং হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ (সোহাগ) এর জন্মস্থান একই গ্রাম,তিনি এ সম্পর্কে জানান, বাক-প্রতিবন্ধী জালাল এ কুটির শিল্পের কাজে অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন এটি বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।

সরকারি ভাবে, কোনো সংস্থা অথবা উদ্যোগি ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতা পেলে, জালাল শ্যামল বাংলার ঐতিহ্যটা ধরে রাখতে পারে,সমাজের বেকারদের জন্য হতে পারে রোল মডেল।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker