টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারস চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক

আনারসের রাজধানী খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুরে জমে উঠেছে রসালো ফল আনারসের বাজার। এখন ভরা মৌসুম।এবার আবহাওয়া অনুুকুলে থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। দামও পাচ্ছেন ভাল।তাদের মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক। তবে বর্তমানে আনারসের দাম কিছুটা কমেছে।

চলছে আনারসের ভরা মৌসুম।টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারস স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। এর সুনাম একনামেই সারাদেশে ছিল। বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ করতে গিয়ে বেশি লাভের আশায় চাষীরা আনারসের আকার, রং উজ্জল ও অসময়ে বাজারে উঠানোর জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। এতে আনারসের বিক্রি ও সুনামে কিছুটা ভাটা পড়ে। আনারসের সেই ঐতিহ্য। ফিরিয়ে আনতে কৃষকরা আবার বিষমুক্ত আনারস চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই হারানো ঐতিহ্য। মধুপুর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় ঢাকা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিলেট, নাটোর, রাজশাহী, খুলনা, হবিগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়নগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ সারাদেশেই আনারস যায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, এ বছর ৬ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এতে আনুমানিক আয় ধরা হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা।

মধুপুরের গড় এলাকার জলছত্র, মোটের বাজার, গারোবাজার, সাগরদিঘী ও আশ্রাবাজারে জমে উঠেছে আনারস কেনাবেচার হাট বাজার। সকাল থেকেই সাইকেল, ভ্যান, রিক্সা, অটো বাইক ও ঘোড়ার গাড়ীতে করে বাজারে আনারস নিয়ে আসেন কৃষকরা। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয় আনারস ভর্তি যানগুলো। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা কৃষকদের সাথে দর কষাকষি করে আনারস ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত আনারস ট্রাকভর্তি করে সারাদেশে সরবারহ হয়। আনারস উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত শ্রমিকরা মজুরি ভালই পাচ্ছেন। বাজারগুলো আনারসের ব্যবসার কারনে জনার্কীর্ন। স্থানীয় খাবার হোটেল ও চায়ের দোকানীদের বেচা বেড়েছে।

আনারসের সবচেয়ে বড় হাট জলছত্রে গিয়ে দেখা যায়, দম ফেলার সময় নেই ক্রেতা বিক্রেতা ও শ্রমিকদের। কথা হয় কৃষক সোলায়মান মিয়ার সাথে তিনি জানান, সে ২০ বছর ধরে আনারসের চাষ কওে আসছেন। তার বাবাও চাষ করতেন। কিছুদিন আগে বাগান থেকে যে ফল ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেটা ২২ টাকা। এবার ফলন ভালো ও নষ্ট কম হয়েছে। অরণখোলার আফাজ আলী বলেন, প্রচন্ড গরমে আনারসের চাহিদা বেশি থাকায় দাম মোটামুটি ভালো। প্রতি আনারসে ৫/৬ টাকা লাভ হয়। ইসমাইল হোসেন বলেন, খরচ অনুয়ায়ী লাভ পাই না। পাইকারদের বেশি লাভ হয়। ফুলবাগচালার কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, বিষমুক্ত আনারস চাষ করছি। তবে দাম সেহারে পাই না।

জলছত্র কাঁচামাল ও সংরক্ষণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন কৃষকদের চেয়ে আগত পাইকরা এবং খুচরা ব্যবসায়ীরাই বেশি লাভবান হয়।

হবিগঞ্জ থেকে আসা পাইকার আব্দুল মালেক বলেন, আনারস ভেদে ২০, ২৫, ৩০, ৪০ থেকে ৫০ পর্যন্ত কিনি। তারপর আড়তে দেই। সেখান থেকে নিয়ে আবার খুচরা বিক্রেতারা পাবলিকের কাছে বিক্রি করে। প্রতি আনারসে ৪/৫ টাকা লাভ থাকে। বেশি লাভ করেন খুচরা দোকনদাররা। তারা ৮০, ৯০, ১০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি আনারস বেচে থাকেন।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, চলতি বছর উপজেলায় আনারসের চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় বেশি। উপজেলা ছাড়াও গড় এলাকার ঘাটাইল, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও মুক্তাগাছা এবং জামালপুর সদরে আনারস চাষ হয়েছে। এখানে হানিকুইন, জায়ান্ট কিউ এবং ফিলিপাইনের এমডিটু জাতের আনারস চাষ হয়ে থাকে। বিষাক্ত কেমিকেল ব্যবহার থেকে কৃষকরা সরে আসতেছেন। মধুপুরের আনারস দেশের বাইরেও প্রসেসিং করে রপ্তানি হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, আনারসের জমিতে আদা, হলুদ, কলা, কচু ও পেঁপে চাষ করা যায়। আনারস বেশির ভাগই জলছত্র পাইকারি হাটে বিক্রি হয়ে থাকে। জুন মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গরমে আনারসের চাহিদা থাকে। গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর বেশি দাম ও পাচ্ছে কৃষকরা। প্রতিপিট আনারস ২০/৫০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভবান হয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker