উত্তরের পথে ঈদে যাত্রী আর চালকদের ভোগান্তি এড়াতে উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ খ্যাত টাঙ্গাইলে কাজ করছেন প্রায় ১৪শ’ পুলিশ সদস্য। এরমধ্যে এলেঙ্গার দুই লেন সড়কে আট শতাধিক পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। তাদের সাথে রয়েছে অস্থায়ী ডিভাইডারসহ দুইশ’ এপিবিএন সদস্য।
অপরদিকে মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের সীমানায় প্রায় ৬শ’ পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ও সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানিয়েছেন, যাত্রী আর চালকদের কথা চিন্তা করেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মহাসড়ক ধরে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের যাত্রা নির্বিঘ্ন আর দুর্ভোগ কমাতে এবছর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার। মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ওয়ানওয়েতে যানবাহন চলাচল করবে। শুধু উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহনের জন্য সড়কের এ অংশটি বরাদ্দ থাকবে। ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে গোলচত্বর দিয়ে গবিন্দবাসী ও ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা প্রবেশ করবে। এতে করে যানজট অনেকটা কমে যাবে।
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চারলেন সড়কের সুবিধায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুইলেন। চারলেনের যানবাহন দুইলেন সড়কে প্রবেশের সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। এবার এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজার কাছে গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার একমুখী (ওয়ানওয়ে) করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে এই সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রোল পাম্প, হোটেল রেস্তোরাগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে সে জন্য তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের পাশে পাম্প, রেস্তোরা নেই। তাই ওই অংশে ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ইফতার ও সেহরিতে যাতে অসুবিধা না হয় সে জন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকে পড়া মানুষের পানি, শুকনা খাবার সরবরাহ ও ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলমও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ের গোলচত্বর থেকে মহাসড়কটির যানজট নিরসনে নানান প্রস্তুতি নিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৬’শ পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
একইসাথে যানজট ও দুর্ঘটনা এড়াতে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। মহাসড়কে পুলিশের এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না বলেও তিনি হুশিয়ারি দিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ইতিমধ্যেই মহাসড়কে যানজট এড়াতে নলকা দ্বিতীয় সেতু খুলে দেয়া হয়েছে। এ সেতু খুলে দেয়ার জন্য এর আগে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ মহাসড়ক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা করা হয়। এ আলোচনার এক সিদ্ধান্তে ঈদযাত্রায় মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে প্রস্তুতি নেয়া হয়। বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও যানজট এড়াতে জেলার মহাসড়ককে ৪ সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর থেকে পাঁচলিয়া বাজার পর্যন্ত ১, পাঁচলিয়া বাজার থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ২, হাটিকুমরুল থেকে কাছিহাটা টোল প্লাজা পর্যন্ত ৩ ও হাটিকুমরুল থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ৪ নং সেক্টর করা হয়েছে। এসব সেক্টরে ৫৭২ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে এবং জেলা পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া ৩টি কুইক রেসপন্স টিম গঠনও করা হয়েছে বলে জানান হাসিবুল আলম।
এদিকে সরেজমিনে আগের তুলনায় কম যানজট দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন দুই পুলিশ সুপারের নানা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।