কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পহেলা বৈশাখ রক্তের হোলির বেদনাদায়ক রেকর্ড

আজও নির্মম বাঁশির করুন সুর ড্রাগনের শব্দে স্বজন হারা উৎকন্ঠায় কাটে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মানুষের ১৪ ই এপ্রিল।

আজ পহেলা বৈশাখ ভৈরবের গণহত্যা দিবস। খেয়াঘাটে পাকহানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ডে নিহত হন ৫ শতাধিক নারীপুরুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের এ দিনে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীর পানাউল্লাহচর এলাকায় এক মর্মান্তিক গণহত্যা সংঘটিত হয়।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্রাশফায়ারে নিরস্ত্র অসহায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ, শিশু নিহত হন। পাকহানাদার বাহিনীর ভয়ে নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরা মৃত লাশগুলো দাফনও করতে পারেননি সেই দিন।

পরবর্তীতে পাঁচ শতাধিক শহীদের লাশ ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গণকবর দেওয়া হয়। স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ এ সময়ে দেশের ইতিহাসে অনেক উত্থান-পতন ঘটলেও, ভৈরবের মানুষ ভুলতে পারেনি সেদিনের সেই মর্মান্তিক গণহত্যার দিনটিকে। বর্বরোচিত গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও পাঁচ শতাধিক শহীদের স্বজনদের কাছে আজও তা দুঃস্বপ্নময় ক্ষত।

প্রতি বছরের ১৪ এপ্রিলকে ভৈরবের মানুষ ‘গণহত্যাদিবস’ হিসেবে শোক পালন করে থাকেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস সারা দেশের মতো ভৈরবেও স্বাধীনতা যুদ্ধে আপামর মানুষ পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতিরোধ করতে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সেই এপ্রিলের ১৪ তারিখ ছিলো পহেলা বৈশাখ। সেদিন ভৈরবের জনগণ পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে ব্যস্ত। তখনই হঠাৎ করে ভৈরবের আকাশে দেখা যায় চারটি জেট বিমান, একাধিক হেলিকপ্টার এবং স্থলপথে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপার রামনগর ব্রিজের নিচে গানশীপ। পাকিস্তানি বাহিনী ওই এলাকা থেকে গানশিপ দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে শহরের দিকে অগ্রসর হয়। দুপুরে সামরিক বাহিনীর কয়েকটি হেলিকপ্টার থেকে উপজেলার মধ্যেরচর এলাকায় পাকিস্তানি সেনা নামে। তারা শহরে প্রবেশ করার সময় পথে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগে মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে।

অপরদিকে হেলিকপ্টার থেকে গ্রামে নামার পর কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে শহরে প্রবেশ করার সময় শিবপুর ইউনিয়নের-পানাউল্লারচর নামক খেয়াঘাটে প্রাণভয়ে পলায়নের সময় নিরস্ত্র-নিরপরাধ পাঁচ শতাধিক মানুষকে নির্মমভাবে ব্রাসফায়ারের মাধ্যমে করে হত্যা করে। তাদের নির্মম শিকার কয়েকশ’ মানুষের তাজা রক্তে সেদিন ব্রহ্মপুত্রের ধূসর জল রক্তিম হয়ে ওঠে। সেদিনের সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই মুহূর্তের দৃশ্য স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠেন। স্বজনরা ফেলেন চোখের জল।

সেদিনের সেই গণকবরের জায়গায় তৈরি হয় স্মৃতিসৌধ। প্রতি বছর এই দিনে ওই স্মৃতিসৌধে স্থানীয়রা ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান এবং নানা আয়োজনে তাদের স্মরণ করেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker