কিশোরগঞ্জ

“অতো শীত থাহে কই, আইয়ে কইত্তে”

“মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে”

কথায় আছে ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’। তবে বাঘ কাঁপছে কি না-তা জানা না গেলেও গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা আর শীতে কাঁপছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের মানুষ। ঘন কুয়াশা হিম বাতাস আর শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

বৃষ্টির বিচরণীতে যেন শীতের মাসি পিসিরা  বাসা বেঁধেছে বিপন্ন জনমনে। গতকয়েক দিনের শীত চরমে উঠেছে, বেড়েছে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ। ঘন কুয়াশা, হিম বাতাস ও শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল, দরিদ্র আর হত দরিদ্ররা। ঘন কুয়াশা, হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে কর্মের সন্ধানে বের হচ্ছেন শ্রমজীবীরা। ছিন্নমূল মানুষ আশ্রয় নিয়েছে চা স্টলগুলিতে, কুঁজো হয়ে বসে অপলক দৃষ্টিতে টিভির পর্দায় তাকিয়ে আছে,প্রায় প্রতিটি গ্রামে।

শুক্রবার (০৪ফেব্রুয়ারি)) হোসেনপুর আকাশের বুকফেটে বৃষ্টি নামক জল গড়িয়ে ভূপৃষ্ঠকে ছুয়াই বাঁধ ভাঙ্গা শীতের দখলদারিত্ব শুরু হয়। দরিদ্র মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে কিছুটা হলেও শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

সাহেবের চর গ্রামের একজন সত্তোর্ধ শাহাজউদ্দীন বলেন, “অতো শীত তাহে কই,আইয়ে কইত্তে” পঞ্চাশোর্ধ শওকত বলেন, “অত শীতে আমরার কাম কাইজ বন্ধ কইরালছে, শীত তু শীতই হিব্বার থাইম্মা থাইম্মা থাইম্মা মেঘ (বৃষ্টি) আইয়ে, দিন আনি দিন খায়, কিবা বাজার করাম,চাউল আনাম বুজদাচিনা।”

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে হোসেনপুরবাসী। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় জবুথবু শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। শীত থেকে বাঁচার সাধ্য কারো নেই। যারা, বছর শেষ হতে চলল আর শীতের দেখা না পেয়ে মনে মনে কষ্ট পেয়েছিলেন। তারা এখন নিশ্চয় উৎসবের আমেজে দিন পার করছেন। সকাল আর সন্ধ্যার অতি সাধারণ একটি দৃশ্য আগুন পোহানো।

কেউ খড়ের মধ্যে, কেউ শুকনা কোনো লাকড়ি বা কাগজের মধ্যে আবার কেউ কেউ কাগজের কোনো কার্টনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে চারপাশে ৭ থেকে ৮ জন মিলে আগুন পোহাতে বসে গেছেন। কোথাও সুযোগ বুঝে হাতে থাকা দিয়াশলাই দিয়ে আগুন দিচ্ছেন শুকনো খড়-কুটায় আবার কেউ সপরিবারে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে, যে যেভাবে পারছেন আগুনের তাপ পোহাচ্ছেন। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ সকলেই যোগ দেন আগুন পোহাতে।

তবে আগুন পোহাতে সতর্কতা অবলম্বনের বালাই নাই অনেকের, কিশোররা আগুন ধরিয়ে হুরাহুরিতেও মেতেছেন। বিগত প্রায় সব বছরেই শীতের সময় দেশের কোথাও না কোথাও অনেক ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে অনেকেই। কাজেই সামান্য সচেতনতার অভাবে চলে যেতে পারে একটি তরতাজা প্রাণ। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করুন।

এক্ষেত্রে নারীরাই বিপদে পড়ে থাকে বেশি। গ্রামাঞ্চলে নারীরা সাধারণত শাড়ি পরেন সব সময়। হাড়কাঁপানো শীত সহ্য করতে না পেরে বাড়ির পাশেই খড়ের মধ্যে আগুন ধরিয়ে তাপ নেয়ার সময় কখন যে শাড়ির আঁচলে আগুন লেগে যায়, তা শীতের তীব্রতার কারণে বোঝা যায় না।

আবার অনেক সময় এমনো হয়েছে যে, শীতের মধ্যে এলাকার ছেলেরা কয়েকজন মিলে কৃষকের খড়ের পুঞ্জির পাশে আগুন পোহাতে গিয়ে সেই পুঞ্জি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কৃষকের জন্য এ ক্ষতি অপূরণীয়। 

আগুন পোহানো হয়ে গেলে আগুন ভালোভাবে নিভিয়ে দিন। না হয় অজান্তে কেউ সেখানে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।  

বাড়ির ছোট সদস্যদের প্রতি বাড়তি নজর দিন। আগুন থেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে বাড়তি গরম কাপড় পরিয়ে রাখুন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker