কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জে তীব্র শীতেও বোরো রোপনে ব্যস্ত কৃষকেরা

কিশোরগঞ্জে বোরো রোপণের ধুম। সোনার বাংলার সোনালী ফসল গোলায় উঠানোর সংকল্প নিয়ে দিনরাত কিশোরগঞ্জের তেরটি থানাতেই অহর্নিশ মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন সোনার কৃষককুল।

প্রচন্ড শীতের তীব্রতা বহু কষ্টে মানিয়ে নিচ্ছেন শরীলে, জীবন ও জীবিকার তাগিদে। বোরো ধানের জন্য উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাত কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় এই প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে চলছে বোরো জমিতে চারা রোপনের ধুম। এবার জেলায় হাইব্রিড, উফশী আর স্থানীয় জাতের বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৭৪ হেক্টর জমিতে। আর এই তিন জাতের বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এবার এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে আবাদ হবে এক লাখ দুই হাজার ৫শ’ হেক্টরে, আর হাওর বহির্ভূত এলাকায় আবাদ হবে ৬১ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার হাওরাঞ্চলে হাইব্রিড ২২ হাজার ১৪০ হেক্টর, উফশী ৭৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর, আর স্থানীয় জাত আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ৫১০ হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে হাওর বহির্ভূত এলাকায় হাইব্রিড ২০ হাজার ৭২০ হেক্টর, উফশী ৪১ হাজার ১৫০ হেক্টর, আর স্থানীয় জাত আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ১১৫ হেক্টর জমিতে।  হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে বিধায় সেখানে আবাদও হয় আগাম। ধান আহরণও শুরু হয় আগাম। যে কারণে সেখানে সিংহভাগ জমি আবাদ হয়ে গেছে। কিন্তু হাওর বহির্ভূত এলাকায় আগাম বন্যার ভয় থাকে না বিধায় সেখানে আবাদ শুরুও হয় বিলম্বে, ধান আহরণও শুরু হয় বিলম্বে। যে কারণে হাওরাঞ্চলে আবাদ প্রায় শেষের দিকে হলেও হাওর বহির্ভূত এলাকায় এখনও আবাদ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

এখন সর্বত্রই কনকনে শীত। আর এই শীতে হিমশীতল পানি আর কাদামটিতে জেলার কৃষকরা কুয়াশাঢাকা সকালেই নেমে পড়ছেন জমিতে। তবে এবার হাওরাঞ্চলে শ্রমিক সঙ্কট তীব্র। এখন মানুষের সামনে বৈচিত্র্যময় পেশার দ্বার উন্মোচিত হওয়ায় বোরো জমির কষ্টসাধ্য কাজে আর আগের মতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

হাওরের প্রচুর মানুষ এখন পোষাক কারখানায় কাজ করতে যায়। আবার গভীর হাওরাঞ্চল জুড়ে নয়নাভিরাম অলসিজন সড়ক নির্মিত হওয়ার ফলে এখন হাওরের পর্যটন গুরুত্ব বেড়ে গেছে। যে কারণে শত শত মানুষ এখন ওই সড়কে ইজিবাইকসহ ইঞ্জিনচালিত হালকা যানবাহন চালাচ্ছে। শত শত মানুষ এখন ইঞ্জিনচালিত নৌযান চালাচ্ছে। অনেকে বিভিন্ন ছোটখাট ব্যবসায় মনোযোগী হচ্ছে। যে কারণে এখন হাওরের শ্রমিকের দৈনিক মজুরি উঠে গেছে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায়। এর পরও শ্রমিক পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে এখন কৃষি বিভাগ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। ধানের চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধানা কাটা এবং মাড়াই, সকল কাজেই যন্ত্রের ব্যবহার রপ্ত করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বহু কৃষক এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরুও করেছেন।

যান্ত্রিকীকরণ রপ্ত করতে না পারলে আগামীতে শ্রমিক সঙ্কট আরো তীব্র হবে। ফলে বিশাল হাওরাঞ্চলে, যেখানে জেলার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বোরো আবাদ হয়, সেখানে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর সরকারও কৃষি রক্ষা এবং কৃষিকে লাভজনক করার লক্ষ্যে হাওরাঞ্চলের জন্য ৭০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker