কিশোরগঞ্জ

সৌন্দর্যের পশরা সাজানো সাহেবের চর গ্রাম

মাহফুজ হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

আমাদের ছোট গ্রাম মধুর সারথি,
বায়ুর স্বাচ্ছন্দ্যে ঘেরা সাথে চান্দের বাতি।
মাঠ ভরা আছে ধান জলে ছলছল নদ,
সুখের হাটবাজার প্রকৃতির রাজ প্রাসাদ।

স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মোহনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আবৃত এদেশের গ্রামগুলি।  গ্রামগুলোর অপার সৌন্দর্য একইসঙ্গে নয়নাভিরাম ও বৈচিত্রময়।

সরকারি হিসেবে প্রায় সত্তর হাজার গ্রাম রয়েছে বাংলাদেশে, তম্মধ্যে সাহেবের চর একটি। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের অন্তর্গত।  প্রত্যেকটি ঋতুর পরিবর্তনের সাথে পাল্টে যায় নতুন রুপে, নতুন বৈশিষ্ট্যে। 

অবারিত মাঠ, সুবিস্তৃত সুনীল আকাশ– যা এক অপূর্ব চিত্তহারী সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে ।গ্রামের বুকছিরে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের ঐপাড়ে এক ঝটকা হাওরের পশরা সাজানো। নদী বিধৌত সরস ভূমি বলেই হয়তাে সাহেবের চর গ্রামে অনায়াসে অসংখ্য বৃক্ষ জন্মে— যা সবুজের সমারােহ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ নদীপ্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামের সাথে নদীর নিবিড় সম্পর্ক। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকার সাথেও নদীর সম্পর্ক রয়েছে। এ গ্রামও তা থেকে ভিন্ন নয়!

ঋতু বদলের সাথে সাথে বদলায় গ্রামের রং, রুপ, লাবণ্য। তাই তো শরতে দেখা যায় শুভ্র মেঘ, কাশফুল, ঝকঝকে নীলাকাশের অপূর্ব সংমিশ্রণ।

Image

কখনো আনন্দের বার্তা নিয়ে নামে শরতের বৃষ্টি। চারপাশের শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টি হৃদয় মনকে করে তোলে প্রফুল্ল। বৃষ্টি শেষে দিগন্তজুড়ে রংধনু মনের মাঝেও যেন আঁকিয়ে দেয় রং। নরম রোদের সকাল, রঙমাখানো সূর্যাস্ত, রাতের স্বচ্ছ আকাশে চাঁদ কিংবা লাখো নক্ষত্র শরতের সৌন্দর্যকে করে তোলে অপার্থিব।

হেমন্তে আবার গ্রাম পাল্টে যায় অন্যরকম আবহে। নির্মল প্রকৃতি আর দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে পাকা ধানের উপর সূর্যের কিরণে চারপাশে বিচরণ করে সোনালী আভা।

নবান্ন উৎসবের সাথে পিঠা পায়েস আর নদী-নালা, খাল-বিলের হাঁটুপানিতে দেখা যায় মাছ ধরার উৎসব। মাঠজুড়ে পাকা ধানের সোনালী রুপ সৃষ্টি করে হৃদয় ভোলানো আবহের।তবে গ্রামের রুপ সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে বর্ষায়। চারদিকে থৈ থৈ পানিতে গ্রাম যেন ভেসে থাকে। সে এক অপরুপ দৃশ্য। রিমঝিম বৃষ্টি আর মেঘ বাদলের লুকোচুরিতে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। ডালে ডালে ফোটে দৃষ্টিনন্দন কদম। বৃষ্টি ও বন্যায় ঝকঝকে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য আছে কার?

সাহেবের চর গ্রামের এক পাজর ছিরে বয়ে চলেছে ব্রম্মপুত্র নদ,অপর পাশে ব্রম্মপুত্রের শাখা নদ মাঝে রয়েছে সাতাল ডোবা পাশাপাশি আবাদী ভূমি হযরত ছুলু শাহ (র:) এর মাজার ডিম্বাকার আকৃতি ধারণ করে  মানুষের বসতি।এক সময় কষ্ট বিজড়িত স্মৃতি থাকলেও বর্তমানে ব্রম্মপুত্র নদে বামতীরের ভাঙ্গন প্রতিরক্ষা বেরি বাঁধ হওয়ায় জনমনে নিগূঢ় স্বস্তি। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দীন এর রয়েছে শ্রম ও ঘামের বিনিয়োগ এ বাঁধ নির্মানে।

বর্তমানে ছবির মতন গ্রাম সৃষ্টিকর্তা যেন এঁকেছেন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। চালতা, বেলী, নয়নতারা, কলমি, কামিনী, অপরাজিতা, কাঠালচাঁপা, দোলনচাঁপা, শিমুল, ঝুমকো জবা, শাপলা, জারুল, ঘাসফুল সহ হাজারো প্রকৃতির ফুল গ্রামের আনাচে-কানাচে, ঝোপে-ঝাড়ে শোভাবর্ধন করে আপন মহিমায়। মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায় শালিক, ময়না, টিয়া, ডাহুক, মাছরাঙ্গা, বক, বউ কথা কও, তিতির, চখাচখি, কাঠঠোকড়া, মোহনচূড়া, মাছরাঙা, পাপিয়া, ফিঙে, তোতা সহ হাজারের কাছাকাছি প্রজাতির পাখি। আম, জাম, কাঠাল, লিচু, জাম, করমচা, নারিকেল, সুপারি তাল সহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ আর লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা সাহেবের চরের মোহনীয়তাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে। সাহেবের চর গ্রামের বাঁশঝাড় তলে কিংবা নদের পাড়ে ব্লকের উপর  বসে পাখির কিচির-মিচিরের সাথে একটি লগ্ন আপনার হৃদয়কে হাজার বছর বাঁচার জন্য আগ্রহী করে তোলার জন্য যথেষ্ট।

শীতে হেমন্তের সাজ খুলে ফেলে গ্রামটি ঢেকে যায় কুয়াশার চাঁদরে। সেই কুয়াশা ভেদ করে সকালের সোনালী রোদ যখন গ্রামে উঁকি দেয়, তখন দেখা মেলে ভিন্নরকম এক সৌন্দর্যের পশরা। মাঠ জুড়ে হলুদ সরিষাফুল, বিভিন্ন রকম শাক-সবজির বিপুল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সমারোহ শীতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান কাঞ্চন বলেন,সত্যিই সাহেবের চর গ্রাম ছবির মতোই সুন্দর, গ্রামের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আরও যা করা প্রয়োজন চেষ্টা করে যাব।সাহেবের চরের বেরি বাঁধের সৌন্দর্য অবলোকন করতে অনেকেই আসে এটা আমাদের জন্য অবশ্যই সুখকর।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দীন জানান,ভয়ংকর সর্বনাশা ব্রম্মপুত্রের কবল থেকে আমার সাহেবের চর গ্রামকে রক্ষা করতে প্রাণপন চেষ্টা করে অবশেষে আমরা সফল হয়েছি।নির্মাণ হয়েছে বাম তীরের প্রতিরক্ষা বাঁধ। নিঃসন্দেহে এখন সাহেবের চর দর্শনীয় গ্রাম। বলতে গেলে এ গ্রাম এখন পর্যটন এলাকা।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker