জাতীয়

বেশি টাকা দেখে ভয় পেয়ে ট্রাঙ্ক ফেলে যায় ছিনতাইকারীরা

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায়, এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেই সঙ্গে আরও দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে ডিবি। এর আগে উদ্ধার করা হয়েছিল তিন কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নতুন উদ্ধার করা অর্থসহ মোট উদ্ধার হয়েছে ছয় কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা।

অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুট করে নেয়া দলটির আট সদস্য গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তারা কীভাবে সেদিন টাকা ছিনতাই করেছে এবং এর আগে কি কি করেছে, তার আদ্যপ্রান্ত জানিয়েছে ডিবিকে।

রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সেই সব কথা জানিয়েছেন ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সানোয়ার হোসেন, ইমন ওরফে মিলন, আকাশ মাদবর, সাগর মাদবর, বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই মিয়া ও এনামুল হক বাদশা।

হারুন অর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় রাজধানী ছাড়াও সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা কিভাবে এই টাকা ছিনতাই করেছে তা জানিয়েছে। প্রথমে সানোয়ারকে পরে ইমনকে এরপর বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ডিবি।

Image

ঘটনার দিন ভোরে একটি হায়েস মাইক্রোবাস সিলেট যাওয়ার উদ্দেশে ভাড়া করা হয়। তাদের কথা মতো ঘটনার দিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সেই প্রাইভেটকার চালক কুর্মিটোলা এলাকার যাত্রী ছাউনির সামনে পৌঁছালে তারা তাকে পেছনের সিট ঠিক করার জন্য বলে।

চালক পেছনে গেলে তারা তার হাত পা চোখ বেঁধে ফেলে সেই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর তারা টাকা বহনকারী সেই গাড়িটিকে অনুসরণ করতে থাকে। এ ঘটনার আগে তারা বহুদিন থেকে অনুসরণ করছিল। তারা অনুসরণ করে লক্ষ্য করেছে, মানিপ্লান্ট লিঙ্ক এর টাকা বহন করার সময় কোন অস্ত্র থাকে না এবং নিরাপত্তাকর্মী থাকে না।

ছিনতাইয়ের আগে তারা সেই গাড়ির একবার সামনে যায় একবার পেছনে আসে। নির্জন এলাকায় গেলে এক পর্যায়ে তাদের সাথে ধাক্কা লাগে। এরপর তাদের একজন বলে আপনারা গাড়িতে ধাক্কা দিলেন কেন, বলার সাথে সাথে সেই গাড়ির গেট খুলে যায়।

শেষে তারা সেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর গাড়ি থেকে সুপারভাইজারকে নামিয়ে দেয়। পরে তারা টাকা গুলো নিয়ে ৩০০ ফিট এলাকার নির্জন স্থানে চলে যায়। অন্যদিকে ট্রাঙ্ক গুলো নিয়ে গাড়িগুলো চলে যায়। এরপর তারা দুইটি ট্রাঙ্ক ভেঙে তাদের সঙ্গে থাকা দুটি চাউলের বস্তা ও একটি ব্যাগ ভর্তি করে। আর কোনো জিনিস না থাকায় টাকাগুলো দেখে তারা ভয় পেয়ে ট্রাঙ্কগুলো রেখে পালিয়ে যায়। এরপর তারা ড্রাইভারের সিটে একটি ব্যাগ ফেলে তাদের কাপড় পরিবর্তন করে চলে যায়। তবে এই কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে।

পরে গাড়িরচালক সুস্থ হয়ে সে এক কোটি সাত লাখ টাকার মতো তার ভাইয়ের হেফাজতে রেখে দেয়। তবে, তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সেই বাসা থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

Image

হারুন বলেন, রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে প্রথমে সানোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয় ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। একই এলাকা থেকে মিলন ওরফে ইমনকে পরবর্তীতে ঝড় সাহারা এলাকা থেকে চারজনকে ৩২ লাখ ৪৭ হাজার টাকাসহ উদ্ধার করা হয়।

তাছাড়া উত্তরা এলাকা থেকে আকাশ ও সাগর গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাসা থেকে এক কোটি সাত লাখ টাকা এছাড়াও এ ঘটনার একটি প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অপর একটি টিম সুনামগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সোনাই এবং এনামুল হক বাদশাকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে, ডাচ বাংলা ব্যাংকের লুট হওয়া টাকা উদ্ধারে খুলনায় অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ চার জনকে আটক করা হয়েছে। রোববার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর জোড়াগেট এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকার ডিবি পুলিশের একটি দল নগরীর জোড়াগেট সিঅ্যান্ডবি কলোনির একটি বাসায় অভিযান চালায়। এসময় ওই বাসা থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়। সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker