কুড়িগ্রাম

প্রয়োজন ৩০ চিকিৎসক, আছেন তিনজন

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৩০টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত তিনজন। তাঁরা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও অন্য একজন চিকিৎসক। দুজন চিকিৎসক ডেপুটেশনে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে কর্মরত। একজন প্রশিক্ষণে থাকায় চিকিৎসকের ২৪টি পদ শূন্য রয়েছে।

এ ছাড়া নির্ভুল রোগ নির্ণয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা চালু থাকলেও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রোগীরা এসব সুবিধা পাচ্ছে না। দুটি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের একটি নষ্ট। চারটি ইসিজি মেশিনের তিনটি অকেজো।

নতুন একটি এক্স-রে মেশিন পাওয়া গেলেও সেটি চালানোর মতো টেকনিশিয়ান নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন টেবিল ও লাইট নেই। এতে উপজেলার দরিদ্র রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অপারেশন সুবিধা পাচ্ছে না। উপজেলার দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

কিন্তু সেখানে নেই উন্নত চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ অসুস্থ হলে যেতে হয় বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে। সেখানে তাদের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে হতদরিদ্র, বিত্তহীন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের রোগীরা বিপাকে পড়েছে।

গত শনিবার সকাল ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দ্বিতীয় তলায় আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার কার্যালয়ে রোগী দেখছেন। সেখানে পুরুষ ও মহিলা রোগীদের দীর্ঘ সারি লক্ষ করা যায়। একই চিত্র দেখা যায়  বহির্বিভাগেও। সেখানে মাত্র একজন চিকিৎসক থাকায় রোগীদের দীর্ঘ সারি হাসপাতালের বারান্দায় চলে এসেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীর স্বজনরা জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম হয় না। এসবের জন্য বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটতে হয়। এতে খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়।’

চিকিৎসা নিতে আসা মোশাররফ হোসেন (৬০) নামের এক বৃদ্ধ জানান, শারীরিক সমস্যা নিয়ে সকালে হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখিয়েছেন। চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষার কাগজপত্র নিয়ে ঘণ্টাখানেক ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম (৪৫) বলেন, ‘দেড় মাস আগে পায়ে ঘা হয়েছিল। তখন এখানে এসে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। এখন ঘা একটু কমেছে। আবার ডাক্তার দেখাতে এসেছি। টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এ কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে  রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি। প্রশাসনিক কাজ সেরে হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখছি।’ চিকিৎসক, চিকিৎসা উপকরণের স্বল্পতাসহ অন্যান্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মনজুর-এ-মোর্সেদ বলেন, ‘ভূরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সংকট ও অন্যান্য সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছি। আশা করছি শিগগিরই এর সমাধান পাওয়া যাবে।’


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker