আন্তর্জাতিক

রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছে সাড়ে ৪ লাখ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি বাহিনীর সম্ভাব্য স্থল অভিযান থেকে বাঁচতে চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ গাজার শহর রাফাহ ছেড়েছেন প্রায় সাড়ে চার লাখ ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ) এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ইউএনআরডাব্লিউএ এক বিবৃতিতে জানায়, গত ৬ মে থেকে রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার লাখ ফিলিস্তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ৫ মে রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য সরে যাওয়ার আহবান জানায় ইসরায়েল।

সামাজিক প্ল্যাটফরম এক্সে পোস্ট করা ওই বিবৃতিতে ইউএনআরডাব্লিউএ আরো জানায়, ‘বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো লাগামহীন ক্লান্তি, ক্ষুধা ও ভয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। তাদের যাওয়ার মতো নিরাপদ জায়গা নেই। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতিই আমাদের একমাত্র আশা।’ গতকাল এক্সে কয়েকটি ছবিও পোস্ট করে ইউএনআরডাব্লিউএ।

ছবিগুলোতে রাফাহ শহরের ফাঁকা রাস্তার চিত্র উঠে এসেছে। ওই রাস্তাগুলোর আশপাশের অঞ্চল তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে ঠাসা ছিল।

এদিকে গাজায় ‘প্রথমবারের মতো’ জাতিসংঘের কর্মী নিহত হয়েছেন। গাড়িতে করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি হাসপাতালে যাওয়ার সময় হামলায় জাতিসংঘের এক কর্মী নিহত এবং আরো একজন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত সোমবার ইউএন লেখা একটি গাড়িতে করে তাদের কর্মীরা রাফাহ শহরের কাছের ইউরোপিয়ান হসপিটালে যাচ্ছিলেন। তবে কারা এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে, এ বিষয়ে জাতিসংঘ থেকে কিছু জানানো হয়নি। অবশ্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাড়িটি সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র দিয়ে যাচ্ছিল এবং ওই পথ সম্পর্কে গাড়ির আরোহীদের কোনো ধারণা ছিল না।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে ইউরোপিয়ান হসপিটালের বাইরে ইউএন লেখা একটি গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। গাড়িটির গায়ে একাধিক গুলির গর্ত রয়েছে। বিবিসি ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে।

ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) নিশ্চিত করে বলেছে, তারা ইউএন ডিফেন্স অব সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি থেকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছে।  যেখানে বলা হয়েছে, তাদের দুই কর্মী গত সোমবার রাফাহ এলাকায় আহত হয়েছেন। আইডিএফ ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করে দেখার কথা জানিয়েছে। এদিকে গাজায় জাতিসংঘের কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় ‘গভীর শোক প্রকাশ করেছেন’ সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন তাঁর মুখপাত্র ফারহান হক।

পৃথক এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেখানে জাতিসংঘের ১৯০ জনের বেশি কর্মী নিহত হয়েছেন।’ তবে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা সোমবারই প্রথম ঘটেছে। এর আগে গত এপ্রিল মাসের শুরুতে ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক খাদ্য দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের ছয় আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মী এবং তাঁদের একজন ফিলিস্তিনি সহকর্মী নিহত হন। ওই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল এবং আইডিএফ ভুল স্বীকার করে তাদের জ্যেষ্ঠ দুই সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে।

এদিকে গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে গাজায় ত্রাণকর্মীদের গাড়িবহর ও অবস্থানে অন্তত আটবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে আগে  থেকেই এসব অবকাঠামো ও গাড়ি বহরের যাত্রাপথের তথ্য দেওয়ার পরও এসব হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। নতুন এক প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কখনোই এসব হামলা সম্পর্কে কোনো ত্রাণ সংস্থাকে অগ্রিম হুঁশিয়ারি বা সতর্কবাণী পাঠায়নি।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker