নওগাঁ

নওগাঁয় হাটের খাস আদায়ের ইজারা প্রদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

নওগাঁর রাণীনগরের কালীগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত জেলার বৃহত্তম ধান ও পশুর হাট হচ্ছে আবাদপুকুর হাট। চলতি সনে এই হাটটির খাস আদায়ের ইজারা প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। চলতি বাংলা সনের বৈশাখ মাসে অবৈধ ভাবে গোপনে খোলা ডাকের মাধ্যমে হাটের নতুন ইজারা প্রদান করা হলেও বিষয়টি জানেন না হাটের খাস আদায় কমিটির কোন সদস্যরা। যদি প্রকাশ্যে খোলা ডাকের মাধ্যমে হাটের ইজারা প্রদান করা হতো তাহলে সরকার আরো দ্বিগুন পরিমাণ রাজস্ব পেতো বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সূত্রে জানা, সর্বশেষ গত ১৪২৯ সনে (২০২২খ্রি:) প্রকাশ্যে খোলা ডাকের মাধ্যমে হাটটি ভ্যাট-ট্রাক্স ছাড়া ৮০লাখ টাকায় ইজারা প্রদান করা হয়েছিলো। এরপর ২০২৩খ্রি: হাটটি খাস আদায়ের আওতায় আনতে একটি মহলের নির্দেশনা মোতাবেক ওই বছর আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্কুল মাঠে পশুর হাট বসতে দিবে না মর্মে একটি মামলা দায়ের করলে পরবর্তিতে হাটটি মামলার যাতাকলে খাস আদায়ের আওতায় চলে যায়। অপরদিকে খাস আদায়ে বাৎসরিক ইজারা প্রদানের কোন নিয়ম না থাকলেও উপজেলা প্রশাসন তা করে আসছে। আর খাস আদায়ের নামে প্রশাসনের সহযোগিতায় গত দুই বছর যাবত নামে হাটের টাকা হরিলুট করছে কতিপয় একটি সিন্ডিকেট।  

সরকারি নিয়মানুসারে উপজেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রনাধীন হাট-বাজারের ক্ষেত্রে খাস আদায়ের জন্য ৯সদস্যের একটি কমিটি থাকবে যে কমিটির মাধ্যমে খাস আদায় হবে। কমিটিতে সভাপতি পদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য পদে চেয়ারম্যান (উপজেলা পরিষদ কর্তৃক মনোনীত পরিষদের একজন সদস্য), সংশ্লিষ্ট হাটের নিকটবর্তি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের ইউপি মহিলা সদস্য, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকবেন। যদি সহকারি কমিশনার ( ভূমি) পদটি শূন্য থাকে তাহলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমিটির সদস্য এমন একজন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব মনোনীত করতে পারবেন।

সরকারের এমন নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে হাট কমিটির সভাপতি অবৈধ ভাবে গোপনে খোলা ডাকের নামে দীর্ঘদিনের একটি সিন্ডিকেটকে খাস আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। অথচ কমিটির অধিকাংশ সদস্যরা হাটের খাস আদায় ইজারার বিষয়টি জানেন না। অপরদিকে হাটের সাপ্তাহিক খাস আদায়ের কাজটি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সহকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব হলেও ঝামেলার কারণে ভূমি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানালে খোলা ডাকের মাধ্যমে গত দুইবছর যাবত বাৎসরিক হিসেবে ইজারা প্রদানের মাধ্যমে খাস আদায় করে আসছে উপজেলা প্রশাসন। এতে করে প্রতি হাটেই খাজনা আদায়ের নামে ক্রেতা-বিক্রেতাদের গলা কাটা হচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের বিশেষ করে গরু, ছাগল ও ভেড়ার খাজনা সরকারি নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এমন অনিয়মকে শুদ্ধ করতে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়সারানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও পরিচালনা করা হয়।

চলতি বাংলা ১৪৩১ সনের (২০২৪খ্রি:) জন্য গত বৈশাখ মাসে আবাদপুকুর হাটটি জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে খাস আদায় কমিটির সদস্যদের উপস্থিতি ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমিটির সভাপতি উম্মে তাবাসসুম অবৈধ ভাবে গোপনে নামমাত্র খোলা ডাকের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করেছেন। দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট হেলু মেম্বার গংদের কাছে প্রতি সপ্তাহে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ৩লাখ (৫২ সপ্তাহ) টাকার বিনিময়ে হাটের খাস আদায়ের ইজারা প্রদান করা হয়েছে। যে সিন্ডিকেটটি কৌশল করে বছরের পর বছর রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছাঁয়ায় আবাদপুকুর হাটের ইজারা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি পণ্যের নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুন টাকা খাজনা হিসেবে আদায় করে আসছে।

আবাদুপুকর হাটের খাজনা আদায়কারী টিমের প্রধান হেলু মেম্বার মোবাইল ফোনে জানান তারা নিয়মানুসারে হাটের খাস আদায়ের ইজারার দায়িত্ব পেয়ে খাজনা আদায় করছেন। আমি একটু ব্যস্ত আছি আপনি পরে ফোন দিয়েন বলে হেলু মেম্বার মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

কালীগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি কর্মকর্তা মো: কৌশিক আহমেদ মোবাইল ফোনে জানান খাস আদায় একটি ঝামেলা পূর্ণ কাজ তাই গতবছরও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাটের খাস আদায় খোলা ডাকের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করেছিলেন। চলতি বছর হাটের খাস আদায় বিষয়ে একটি নোটিশ পেয়েছিলাম। আর চলতি বছর খাস আদায়ের ইজারার খোলা ডাকের দিন আমাকে বলা হয়নি বিধায় বিষয়টি আমার জানা নেই।

আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান মোবাইল ফোনে জানান চলতি বছর আবাদপুকুর হাটের খাস আদায়ের ইজারা বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই। আমি কমিটির একজন সদস্য হলেও কিভাবে হাটটির খাস আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিছুই জানানো হয়নি। তবে যেভাবেই হাটের খাস আদায়ের ব্যবস্থা করা হোক না কেন খোলা ডাকের দিন কমিটির সকল সদস্যদের উপস্থিতিতেই ইজারা প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত ছিলো। তাহলে কমিটির সদস্যদের মাঝে এই বিষয়ে আর কোন সন্দেহ থাকতো না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: আব্দুল কাহার মোবাইল ফোনে জানান তিনি খাস আদায় কমিটির সদস্য হলেও হাটের ইজারার বিষয়ে কোন কিছুই জানেন না। অবৈধ ভাবে গোপনে হাটের ইজারা প্রদান করার কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আমরা স্থানীয়রা।  

কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব চাঁন মোবাইল ফোনে জানান আমার ইউনিয়নের মধ্যে থাকা বৃহত্তম আবাদপুকুর হাটের খাস আদায়ের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কবে কিভাবে কখন খোলা ডাকের মাধ্যমে হাটের খাস আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বারবার জানতে চাইলেও আমাকে বিষয়গুলো জানানো হয়নি। অনেক পরে বিষয়টি জানতে চাইলে ইউএনও জানান যে জেলা প্রশাসক স্যার ও স্থানীয় এমপির নির্দেশনা মোতাবেক সিন্ডিকেট হেলু মেম্বার গংদের কাছে হাটের খাস আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আমি ওই হাটের প্রতি সপ্তাহের ইজারা মূল্য ৪লাখ দিতে চাইলেও হাটের খাস আদায়ের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়নি। উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট হেলু মেম্বার গং এর সঙ্গে আঁতাত করে হাটের টাকা হরিলুট করছে। হাটের খাস আদায়ের ক্ষেত্রে কোন নিয়মই মানা হয়নি এবং মানা হচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাটের খাস আদায় কমিটির সভাপতি উম্মে তাবাসসুম মোবাইল ফোনে বলেন ১৪৩০সনের (২০২৩খ্রি:) চেয়ে প্রায় দ্বিগুন টাকায় ১৪৩১সনের (২০২৪খ্রি:) জন্য খোলা ডাকের মাধ্যমে আবাদপুকুর হাটের খাস আদায়ের ইজারা প্রদান করা হয়েছে। যারা হাটের ইজারা মূল্য সবচেয়ে বেশি দিয়েছেন তাদেরকেই খাস আদায়ের ইজারার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারও জানেন। এককথায় সকল নিয়ম মেনেই আবাদপুকুর হাটের খাস আদায়ের ইজারা প্রদান করা হয়েছে।

Author

দ্বারা
মোঃ খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker