টাঙ্গাইলহিন্দু

দেড়শ’বছর ধরে চলে আসা ডুবের মেলায় লতিফ সিদ্দিকীকে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত পূণ্যার্থীরা

টাঙ্গাইলের কালিহাতী ও বাসাইলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারী) ভোর ৫ টাকা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই ডুবের মেলায় নানা মনোবাসনা পূরণ ও পূণ্যের আশায় এক কাপড়ে স্নান করেছেন হাজারো পূণ্যার্থী। কালিহাতীতে দেড়শ’বছর ধরে চলে আসা ডুবের মেলায় সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে স্বস্ত্রীক উপস্থিত পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত পূণ্যার্থীরা।

জানা গেছে, প্রতি বছর কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদের পোয়াতি বিলের একটি নির্দিষ্ট স্থানে মাঘী পূর্ণিমায় ‘স্নান’ অনুষ্ঠিত হয়। বাসাইল উপজেলা সদর ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বংশাই নদীর পূর্ব-উত্তর তীড়ে রাশড়া-সৈয়দামপুর গ্রামে গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী পোয়াতি বিলে মানত করে পাপ মোচনের জন্য আসেন। মানত পুরণের জন্য তারা পোয়াতি বিলে স্নান করেন, সাধ্যানুযায়ী মানত (টাকা-পয়সা) বিলের পানিতে ছুঁড়ে ফেলেন ও স্থানীয় মন্দিরে দান করেন। ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে হরেক রকমের দোকানপাট-মেলা বসে। এবারের পোয়াতি স্নানানুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী স্বস্ত্রীক অংশ নেন। তাকে কাছে পেয়ে ভক্ত-অনুরক্ত ও স্নানে অংশ নেওয়া পূণ্যার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। কেউ তাকে মালা পড়িয়ে দেন, কেউ কদমবুছি করে দোয়া চান, আবার কেউ হাউমাউ করে কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে জড়িয়ে ধরেন। আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত লতিফ সিদ্দিকী স্নানাস্থানে গিয়ে আগতদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। তিনি আগতদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের আদর করে নানা কথা জেনে নেন।

অপরদিকে, বাসাইলে দেবতা (মাদব ঠাকুর) এর মূর্তিতে প্রণাম করে ভোরে গঙ্গাস্নানের মাধ্যমে মেলা বা পূজার কার্যক্রম শুরু হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পাপ মোচনের লক্ষ্যে মানত ও গঙ্গাস্নান করেন।

এলাকাবাসীরা জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ভক্ত সাধু নামে খ্যাত এক সন্যাসী (মাদব ঠাকুর) এর মূর্তি প্রতিস্থাপন করে মনোবাসনা পূর্ণ করতে গঙ্গাস্নান ও পূজা অর্চনা করা শুরু হয়। তখন থেকে প্রতিবছর মাঘী পূর্ণিমার রাতে গঙ্গাস্নান এবং পূজা অর্চনা চলতে থাকে। পরে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একে মেলা এবং আনন্দ উৎসব হিসেবে পালন করে আসছেন। ওই সময় থেকে এটা ডুবের মেলা নামে পরিচিত।

কালিহাতী উপজেলার পারথী ইউপি চেয়ারম্যান মো: লিয়াকত আলী তালুকদার জানান, প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে পোয়াতি বিলে নি:সন্তান দম্পতিরা সন্তানের আশায় মাঘী পূর্ণিমায় স্নান করে থাকেন। এক সময়ের সাধারণ স্নান এখন ব্যাপক জনসমাগমের স্থানে পরিনত হয়েছে। স্নানের সুবিধার্থে চারদিকে চারটি ঘাটলা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন জানান, ডুবের মেলা যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ রয়েছে- তাই জমির আইল ধরে দর্শনার্থীরা যাতায়াত করছে। তিনি নিজ উদ্যোগে বা প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker